নিজস্ব প্রতিবেদক: জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার অংশ হিসেবে তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে নারী ও শিশুদের রক্ষা করা জরুরি বলে মনে করেন তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম। এ জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের তাগিদ দিয়েছেন তারা। ৪ নভেম্বর সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী’র আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব দাবি তুলে ধরেন তারা।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব শিবানী ভট্টাচার্য, তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ পলি ও যুগ্ম আহ্বায়ক আফসানা নওরিন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী ৬ দাবি তুলে ধরে নাছরিন আকতার বলেন, দেশে বর্তমানে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। শুধুমাত্র তামাক ব্যবহারজনিত রোগেই প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ৪৪২ জন। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ করা এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসি‘র সঙ্গে সমন্বয়ের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত খসড়ায় প্রস্তাবিত বিষয়বস্তুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় সকল পাবলিক প্লেস এবং গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করাসহ তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধে বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা এবং তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। পাশাপাশি ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো পণ্য আমদানি, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা ও তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়।
এ সময় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবিতে যুব বান্ধব সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক শিবানী ভট্টাচার্য।
পাবলিক প্লেসে ধূমপান করাকে এক ধরনের বৈষম্য বলে উল্লেখ করে শিবানী ভট্টাচার্য বলেন, ধূমপান না করেও পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। যার মধ্যে বেশি ক্ষতির শিকার হন নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীদের অকালে গর্ভপাত, অপরিণত শিশুর জন্ম, স্বল্প ওজনের শিশু, গর্ভকালীন রক্তক্ষরণ, প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, মৃত শিশুর জন্ম দেয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক কোম্পানিগুলোর মিথ্যাচারে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানান।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন হলে দেশে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মিথ্যাচার চালাচ্ছে তামাক কোম্পানি। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)-এর প্রোগ্রামস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর তথ্য অনুসারে দেশে বিড়ি কোম্পানিতে শ্রমিক নিয়োজিত আছে মাত্র ৪৬ হাজার। আর দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে দুই বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি বিএটিবি ও জেটিআই। তামাক কোম্পানির প্রতিবেদন অনুসারে তাদের কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৭৬৯ জন (বিএটিবির এক হাজার ৬৬৯ জন এবং জেটিআইয়ের প্রায় ১০০ জন)। সিগারেট কোম্পানিগুলো ৭০ লাখ লোক কাজ হারাবে বলে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তামাক কোম্পানির কুচক্র ও আইন সংশোধনে বাধা দেয়ার জন্য তীব্র নিন্দা জানান ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)-এর কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা। তামাক কোম্পানির এসব কুচক্রগুলো মিডিয়ার সামনে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের আহ্বান জানান তিনি।
তামাক কোম্পানির নানান রকম কূটকৌশল তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসে বাধা তৈরি করছে বলে জানান লিড পলিসি অ্যাডভাইজার এবং বিসিআইসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে বলে তামাক কোম্পানি প্রচারণা চালাচ্ছে, এটি আদৌ যুক্তিসংগত নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের তথ্যই বলে দেয় তারা মিথ্যাচার করছে। বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক থেকে রাজস্ব ছিল দুই হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬ এ রাজস্ব আদায় হয় তিন হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যখন আইনটি সংশোধন করা হয়, সেই বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। তাই তামাক কোম্পানিগুলোর এই সকল ভ্রান্ত প্রচারণা থেকে নীতি নির্ধারকদের সতর্ক থাকা এবং দেশের তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরামের সদস্যরা, গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ, গার্লস গাইড রেঞ্জার ইউনিট, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ সদস্যসহ অংশীজনেরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available