নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘প্রযুক্তির আসক্তি খারাপ নয়, যদি তার সদ্ব্যবহার করা হয়। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগাতে হবে। ইনোভেটিভ কাজকে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি তরুণদের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাদকাসক্তি রোধ করতে হবে।’ ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে দি বাংলাদেশ এন্টি ড্রাগ ফেডারেশন আয়োজিত ‘আসক্তির ভয়াবহতা ও ক্যারিয়ারে বিভ্রান্তি: সমাধান যে পথে’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার ছিলো সময় জার্নাল।
দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মশিউর রহমান। এসময় তিনি বলেন, আমরা শুধু মাদকাসক্ত নয়, ক্ষমতার আসক্ত, বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। প্রযুক্তির আসক্তি খারাপ নয়, যদি তার সদ্ব্যবহার করা হয়। যে দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে, সে দেশ মাদকের ভয়াবহতা রুখে দিতে পারে।
এর আগে সকালে উদ্বোধনী সেশনে সভাপতিত্ব করেন দ্যা বাংলাদেশ এন্টি ড্রাগ ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম রলি। পুরো কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক শিরিনা খাতুন বিথি এবং কবি ও সাংবাদিক ইমরান মাহফুজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর কিউরেটর এবং সাবেক শিক্ষা ও আইসিটি সচিব নজরুল ইসলাম খান (এনআই খান), সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মনজুর রহমান।
সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের চিন্তার বিষয়কে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমরা পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ থেকে খারাপ জিনিসগুলো শিখি। তাদের ভালো জিনিসগুলো শিখি না। তারা সিদ্ধ খাবার খায়। এটা তাদের ভালো দিক। ল্যাটোস খাবারের কারণেও আসক্তি হয়। তাই খাবার নির্বাচনেও সতর্ক থাকতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, পৃথিবীর বড় বড় ডাক্তার, উকিলদের ডিগ্রিগুলো ইংল্যান্ডের। এখন দেশ থেকে যারা বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করতে বিদেশে উন্নত জায়গায় যায়, তারা আর ফেরত আসে না। এখন নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের তৈরি করার জন্য উপাদানগুলো আপনার হাতের মুঠোয়। আগে কথা বলার জন্য নীলক্ষেত অথবা উত্তরায় কল বুকিং দিয়ে বসে থাকতে হতো। আগে গবেষণার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে লাইব্রেরির বই যথেষ্ট ছিল না। বায়তুল মোকাররম, জাদুঘরে যেতে হতো তথ্য সংগ্রহ করতে। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবকিছুই আপনার হাতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কর্মশালাটি চারটি সেশনে পরিচালিত হয়। সেগুলো হলো- ১. মাদকে কেন আসক্ত হয় এবং পরিত্রাণের উপায়, ২. ডোপ টেস্ট কি, কেন জরুরী, ৩. ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং এবং ক্যারিয়ার গাইড লাইন এবং ৪. ইন্টারনেট আসক্তি এবং রক্ষার উপায়।
মাদকে কেন আসক্ত হয় এই বিষয়, ইন্টারনেট আসক্তি এবং রক্ষার উপায় এ বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও মানসের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরুপরতন চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে চারিদিকে ভয়াবহ আকারে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। যে বয়সে তরুণদের উদ্যমী হয়ে সৃষ্টিশীল কাজ করার কথা ছিল, সে বয়সে তারা ইয়াবা সেবন করে। কিন্তু প্রত্যেক তরুণকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ মাদক চুল পড়া, চোখে ছানি পড়া, মুখে ও গলায় ক্যান্সার, পরিপাকতন্ত্রে ক্যান্সার, পুরুষের যৌব ক্ষমতা হ্রাসসহ মানবদেহের সকল অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে। অনেকের মাঝে ভুল ধারণা রয়েছে, ই-সিগরেট তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এটিও সমান ক্ষতিকর।’
'কোন বয়সে বিভ্রান্তি: কোন বয়সে লক্ষ নির্ধারণ করতে হবে' বিষয়ের উপর বক্তব্যে রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের সভাপতি আরিফ খান বলেন, পৃথিবীর সকল মানুষ অনন্য। ফলে প্রত্যেককে নিজের উপযুক্ত বিষয় বাছাই করতে হবে। আমাদের সমস্যা হলো, মানুষের থেকে অণুপ্রেরণা নেয়ার বদলে তার মতো হতে চাই। পৃথিবীর সফল হওয়ার একটি গোপন কথা হলো পরিশ্রম মেধার সমার্থক। সমাজ ‘মেধা’ এবং ‘পরিশ্রম’ শব্দকে আলাদা করে দিয়েছে। অথচ সৃষ্টিকর্তা ন্যায়পরায়ণ এবং আমার প্রাপ্য মেধা তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন। ফলে পরিশ্রমই কেবল মানুষকে আলাদা করে দেয়।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন বলেন, আমাদের মাঝে মৌলিক প্রশ্ন উৎপাদন করার মানসিকতা থাকতে হবে। এই প্রশ্ন থেকেই আমাদের মাঝে চিন্তার জন্ম হবে। মানুষের কাজ হলো এই চিন্তাকে ইতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। মোবাইল ফোনকে আমরা বর্তমানে খুবই নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করছি। অথচ চাইলে এর সর্বোচ্চ সার্থক ব্যবহার সম্ভব হতো।
সমাপনী অনুষ্ঠানে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘মাদকাসক্ত ও মাদক সেবন শুধু নেশা নয়, এটা একটা রোগ। প্রেমঘটিত কারণ, একাকিত্ব, হতাশার কারণে মাদকাসক্ত হয়ে যায়। মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিকল্প হিসেবে বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের ৬৪ জেলায় মাদকসেবীদের চিকিৎসার সুযোগের আছে। কেউ মাদকাসক্ত হলে বিন পয়সায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
আরও বক্তব্য রাখেন বিসিএস কোচিং কনফিডেন্স’র পরিচালক লায়ন তাসলিমা গিয়াছ, বিকন পয়েন্টের সিইও এম তৌহিদুল বাশার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান, অনলাইন শিক্ষক ও প্রশিক্ষক কে এম হাসান রিপন, সংগঠনের উপদেষ্টা খবির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রতিটি সেশনের গান, কবিতা আবৃত্তি এবং কুইজের আয়োজন করা হয়। বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। সার্টিফিকেট বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপী আয়োজনের সমাপ্তি হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available