কেমন আছেন শিবগঞ্জের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

সাজু মিয়া, বগুড়া:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর গৃহহীন প্রান্তিক ও অতি-দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ অনুধাবন করে তাদের পুনর্বাসনে ‘আশ্রয়ণ’ নামের যে প্রকল্পের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বেঁচে থাকতে প্রত্যেকটি মানুষের প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণসহ নানা নাগরিক সুবিধা। যার সবটাই রয়েছে সরকারের মানবিক কর্মসূচি আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

আশ্রয়ণের জন্য গৃহীত প্রকল্প এলাকায় আশ্রয়হীন মানুষের কর্মসংস্থানে হাঁস-মুরগি-গবাদিপশু পালন, মৎস্য চাষ, তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য স্কুল, মক্তব, মাদ্রাসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। গৃহহীন, আশ্রয়হীন মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে দরিদ্র পরিবারের নারী, শিশুদের বঞ্চনার অনেকাংশেই অবসান হয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বগুড়ার শিবগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি পেয়ে হাসি ফুটেছে ৪৪০টি দরিদ্র পরিবারের মুখে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ২টি বেডরুম, ১টি টয়লেট ও ১টি রান্না ঘর।

শিবগঞ্জ ইউনিয়নের ধোন্দাকোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় প্রকল্পের বাসিন্দা মনিকা বেগম, জেসমিন বেগম ও নুরনাহার বেগমের সাথে। তারা তিনজন মিলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের বারান্দায় নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করছিলেন। তারা জানান, রকম ভেদে প্রতিটি নকশিকাঁথা এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মাসে ১/২টি নকশিকাঁথা সেলাই করা যায়।

মনিকা বেগম জানান, ‘আমার স্বামী অটোচালক। আমি নকশিকাঁথা সেলাই করে ও ছোট্ট মুদির দোকান করে বেশ ভালোই আছি। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় চাষ করছি বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি।’

এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪০টি ঘর আছে। যার মধ্যে ১১টি হিন্দু পরিবার ও ২৯টি মুসলিম পরিবার। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শেফালী বালা বলেন, ‘আমার ঘরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝড় ও বৃষ্টি আসলে দুই সন্তান নিয়ে ঘরে থাকতে খুব ভয় লাগে। সরকার আমার ঘরটি সংস্কার করে দিলে সন্তানদের নিয়ে নির্ভয়ে বসবাস করতে পারতাম।’

সরেজমিনে বিহার ইউনিয়নের পারলক্ষ্মীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ৩০টি পরিবার নিয়ে এ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। দিনমজুর, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, টিউবওয়েল মিস্ত্রি, অটোচালক ও তাঁতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
এখানকার বাসিন্দারা জানান, ‘ঘর পাওয়ার আগে বর্ষা ও শীতকালে আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হতো। কারণ আমরা তখন কার্যত খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতাম। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিনামূল্যে ‘উপহার’ হিসেবে এক টুকরা জমি ও বাড়ি আমাদের মতো আশ্রয়হীন মানুষকে খুশি করেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প আমাদের পরিবারের জীবনকে বদলে দিয়েছে।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ওলিমন বেগম জানান, ‘আগে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। আমি ও আমার স্বামী তাঁতের কাজ করে জীবিকা র্নিবাহ করি। প্রতি মাসে ৬০ থান গামছা তৈরি হয় আমাদের তাঁতে। এসব গামছা উপজেলার বিভিন্ন হাটে পাইকারী বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে বেশ ভালোই চলছে আমাদের সংসার।’

এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাস করা কাঠমিস্ত্র আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ছোট সংসার। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে দিনে যা রোজগার করি তা দিয়ে সংসার বেশ ভালোই চলছে।’

কথা হয় উপজেলা মাঝিহট্ট ইউনিয়নের ছাতুয়া (মাতালপাড়া) আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায় এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২১টি ঘর আছে। যার মধ্যে মুসলিম পরিবার ১৭টি ও হিন্দু পরিবার রয়েছে ৪টি। আমাদের সন্তানেরা এখন স্কুলে যায়, আমাদের আবাসনে ডিস লাইনের সংযোগও আছে।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শিরিন বেগম জানান, ‘আমি ছাগল পালন করে সংসার চালাই। আমার স্বামী একজন অটো চালক। এখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিকভাবে চললেও রয়েছে যাতায়াতের জন্য রাস্তা ও পানির সমস্যা।’

সার্বিক বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘শিবগঞ্জ শতভাগ গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা। প্রতিটি বাড়ি যেন জীবিকা নির্বাহের উৎস। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তা-চেতনার সুফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। চলাচলের সমস্যার বিষয়টি অতি দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। দু’একটি ঘরের যে সমস্যা আছে তা দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।’