কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের রাধানগর গ্রামের মানুষের দীর্ঘ ৫০ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। চলাচলের অনুপযোগী কাঁচা রাস্তার দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে এলাকাবাসী নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজস্ব অর্থায়নে গ্রামের প্রায় ৩০০ ফুট রাস্তায় ইট বিছানোর কাজ শুরু করেছেন। সরকারি সাহায্য ছাড়াই এ ধরনের উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের ঐক্য, প্রত্যয় এবং সংকল্পের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাধানগর গ্রামের প্রায় ৩০০ ফুট কাঁচা রাস্তা, যা রাধানগর তিন মাথা মোড় থেকে স্থানীয় এবতেদায়ী মাদ্রাসা পর্যন্ত বিস্তৃত। বর্ষাকালে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ত। রাস্তার বেহাল দশায় স্কুলগামী শিশুসহ সাধারণ মানুষের যাতায়াতে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বিশেষ করে, রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া কিংবা কৃষকদের মাঠের ফসল আনা-নেওয়াও ছিল দুঃসাধ্য কাজ। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো ফল না পেয়ে গ্রামের মানুষ নিজেরাই সমাধানের পথ খুঁজে নেন।
গ্রামের মানুষ নিজেদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ইট, বালি এবং অন্যান্য সামগ্রী কিনে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। পুরুষ-মহিলা, শিশু-বৃদ্ধ সবাই এই কাজে অংশ নিচ্ছেন। রাস্তার ৩০০ ফুট অংশে ইট বিছানোর কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। সবাই মিলে পরিশ্রম করে নিজেদের স্বপ্নের রাস্তা তৈরি করছেন, যা তাদের জীবনযাত্রায় বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
স্থানীয় কৃষক ওয়াজেদ আলী বলেন, “বছরের পর বছর কাঁচা রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। বর্ষাকালে রাস্তাটি একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ত। নিজেদের উদ্যোগেই আমরা এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছি।”
কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, “ফসল আনা-নেওয়ার সময় আমরা অনেক ভোগান্তির শিকার হতাম। রাস্তা নির্মাণ হলে এই কষ্ট দূর হবে। তাই আমরা কৃষকরা মাঠে কাজ করেও এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছি। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করছি, যাতে আমাদের চলাচল আরও সহজ হয়।”
ভ্যানচালক আবু তাহের বলেন, “বর্ষায় কাদা জমে ভ্যান চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ত। দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। এখন এই ইট বিছানো রাস্তা আমাদের চলাচলে সহজ হবে।’
শিক্ষার্থী হোসাইন আহম্মেদ ও মীম আক্তার বলেন, “বর্ষাকালে কাদা জমে স্কুলে যেতে পারতাম না। এখন রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু হওয়ায় আমাদের সুবিধা হবে।”
গ্রামের অভিভাবক অধ্যক্ষ আব্দুল করিম বলেন, “এলাকাবাসী মিলে যে কাজ শুরু করেছি, তা আমাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব করবে। তবে প্রশাসনের আর্থিক সহায়তা পেলে কাজটি আরও দ্রুত ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, “রাধানগর গ্রামের মানুষের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তারা প্রমাণ করেছেন, জনসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পরিদর্শন করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান বলেন, ‘এই উদ্যোগটি শুধু একটি রাস্তা নির্মাণ নয়, বরং রাধানগর গ্রামের মানুষের ঐক্য, প্রত্যয় এবং দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক হয়ে থাকবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available