মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: সিলেট পঞ্চগড়ের পর এখন টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের আনারসের রাজধানীতেও চাষ হচ্ছে চা। উপযোগী মাটি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ায় দেখা দিয়েছে চা চাষের বাণিজ্যিক ও চাষ সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা। রো- বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় কম খরচে পরীক্ষামূলক চা চাষ হচ্ছে মধুপুরে। ৪ বছর আগে গড়ে তোলা বাগানের ফলন পেয়ে খুশি কর্তৃপক্ষ। কৃষি বিভাগ বলছে, গড় অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া চা চাষের জন্য উপযোগী। এ অঞ্চলে চা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আনারস ও কলার মতো মধুপুর হয়ে উঠবে চা চাষের জনপদ।
বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ড বৃহত্তর ময়মনসিংহের গারো পাহাড় ও মধুপুর গড় অঞ্চলের ৬ উপজেলায় চা চাষের জন্য সমীক্ষা করে। সমীক্ষার পর চা উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পঞ্চগড় থেকে চারা এনে মনিকা এগ্রো ফার্ম মুক্তাগাছার মলাজানি গ্রামে আড়াই বিঘা জমিতে গত চার বছর আগে চা চাষ শুরু করে। এটি লাল মাটির প্রথম চা বাগান। সার বিষ নিড়ানিসহ নিবিড় যত্নে গড়ে উঠেছে বাগানটি। বাগানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে পথ। সহজেই যাতায়াত করা যায়। বছরে দুই বার ছাঁটাই করা হয়। তবে লাল মাটির গড় অঞ্চলে চা সম্প্রসারণ, কৃষকরা যাতে সহজে সুলোভ মূল্যে চারা পায় সেজন্য তারা আন্তরিক বলে জানালেন মনিকা এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার আরিফুর রহমান।
স্থানীয়রা জানালেন, লাল মাটির মধুপুর গড়ের ভূপ্রকৃতি কোথাও একটু উঁচু, কোথাও একটু নিচু। তবে বেশির ভাগ এলাকা সমতল। সামান্য উঁচু এলাকার পাশ দিয়ে বাইদ রয়েছে। বৃষ্টির পানি সহজেই নেমে যায়। যে কারণে আনারস, কলা, কফিসহ নানা কৃষি ফসল চাষ হয়ে থাকে। মাটির এ বৈশিষ্ট্যের কারণে সহজেই চা চাষও হচ্ছে।
সরজমিনে মলাজানি চায়ের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চায়ের সবুজ-সতেজ পাতা দোল খাচ্ছে গাছে গাছে। সারিবদ্ধভাবে গাছগুলো ছোট ছোট পাতায় ছেয়ে গেছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কচি পাতার উপর সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। রয়েছে বাগানের চারপাশে সবুজ বৃক্ষাদি। চা বাগানের ভেতরে ছায়া রাখার জন্য মাঝে মাঝে লাগানো গাছগুলো বাগানের সৌন্দর্য ও ফলনকে ত্বরান্বিত করছে। গাছের সারিগুলো লম্বালম্বি করে দেয়ায় আলো বাতাসও পাচ্ছে পরিমিত। বাগানের একপাশে পিচঢালা সড়ক অপর পাশে নিচু বাইদ, চারদিকেই সবুজ কৃষি এলাকা।
লাল মাটির গড় অঞ্চল বিভিন্ন কৃষি ফসলের জন্য খ্যাতি অর্জনের পর চা চাষ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা হলে চাষ সম্প্রসারণ ও বাণিজ্যিক হবে এমনটাই মনে করছেন, স্থানীয় সাংস্কৃতিকর্মী রাতুল মুন্সি।
স্থানীয় ইত্তেফাকের সাংবাদিক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন বলেন, চা উন্নয়ন বোর্ড গারো পাহাড় ও মধুপুর গড়ের সমতল এলাকায় সমীক্ষা করেছে। সমীক্ষায় ১৬ হাজার একর জমিতে চা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে।
মনিকা এগ্রো ফার্ম ম্যানেজার আরিফুর রহমান জানান, চা উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে লাল মাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে মনিকা এগ্রো ফার্ম প্রথম চা চাষ শুরু করেছে। ফলনও ভালো পাচ্ছে। গড় অঞ্চলে চা চাষ সম্প্রসারণ, কৃষকরা যাতে সহজে চায়ের চারা নিতে পারে সে জন্য মাতৃ বাগান করেছেন তারা।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা বলেন, লাল মাটির মধুপুর গড় অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া চা চাষের জন্য উপযোগী। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে মধুপুর গড়ে চা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
লাল মাটির মধুপুর গড় অঞ্চলের আনারস, কলা, পেপে, কাজু বাদাম, কফি, আদা, কচু যেমন খ্যাতি অর্জন করেছে। তেমনি চা চাষেও সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চল হতে পারে কৃষি সমৃদ্ধ জনপদ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে স্থানীয়দের। বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে দেশ, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available