কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাইয়ে হাট-বাজারে ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে ধানের চড়া দামে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলার বড় হাট-বাজার কালাই পাঁচশিরা বাজার, পুনট ও জিন্দারপুর বাজারসহ অন্যান্য বাজারে ধানের দাম প্রতি মণে ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে মোটা জাতের আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৪৫০ টাকায়, চিকন জাতের ধান ১৬৫০-১৭০০ টাকায় এবং কাটারি ধান ১৯০০-১৯৫০ টাকায়।
কৃষকরা জানান, বাজারে তারা তাদের পছন্দমতো দাম পাচ্ছেন। রাস্তাতেই পাইকাররা দরদাম না করেই ধান কিনে নিচ্ছেন। ফলে তাদের গুদামে গিয়ে ধান বিক্রি করার আগ্রহ নেই।
কালাই উপজেলার কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, গুদামে দিলে ৩৩ টাকা কেজি পাব, কিন্তু বাজারে সেই ধান বিক্রি করছি ৪০-৪১ টাকায়। আর গুদামে ঝামেলাও বেশি। বাজারে এমন সুবিধা পেলে গুদামে কম দামে ধান দেব কেন?
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরান জানান, ‘বেশিরভাগ কৃষক ধান পরিষ্কার না করেই আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। অথচ পাইকাররা এই ধান কিনে নিলেও আমরা তা নিতে পারি না। আবার বাজারে ধানের উচ্চমূল্য ছাড়াও কৃষকরা যথাযথ আর্দ্রতা মানছেন না। ধানের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। কিন্তু কৃষকরা ১৭-১৮ শতাংশ আর্দ্রতার ধান নিয়ে আসছেন, যা গুদামে সংরক্ষণ সম্ভব নয়। ফলে সংগ্রহ অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।’
এবার জয়পুরহাটে ৩৩ টাকা কেজি দরে ৪ হাজার ৮৩৯ মে. টন ধান এবং ৪৭ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ৫৫৯ মে.টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। তবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮১ মে.টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ১.৭৩ শতাংশ। চাল সংগ্রহ কিছুটা এগিয়েছে, যা বর্তমানে ৭ হাজার মে. টনে পৌঁছেছে (লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ)। ধান সংগ্রহের অভিযান শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জয়পুরহাটে এবার ৬৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এতে ২ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হলেও বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে সরকারি সংগ্রহ অভিযান লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নয়। তবে চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। কৃষকদের বাজারে দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে না পারায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
সরকারি সংগ্রহ অভিযানে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে কিছুটা সফলতা আসলেও তারা লোকসানের শিকার হচ্ছেন। জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি লায়েক আলী জানান, ‘ধানের দাম বেশি হওয়ায় চাল তৈরি করতে গড়পড়তায় প্রতি কেজিতে ৪-৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। কিন্তু লাইসেন্স রক্ষা করতে এবং সরকারের চাপে চাল দিতে বাধ্য হচ্ছি। যদি ধানের দাম কমানো বা সরকারের ক্রয়মূল্য বাড়ানো না হয়, আমাদের চাল সরবরাহে টিকে থাকা কঠিন হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘বর্তমান বাজারে সর্বনিম্ন ধানের কেজি পড়ে ৩৬ টাকা। সেই ধান কিনে চাল তৈরি করতে প্রতি কেজির খরচ ৫০-৫১ টাকা। অথচ, সরকার কিনছে ৪৭ টাকায়। এই পরিস্থিতিতে মিলারদের জন্য এটি এক অসম্ভব চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available