পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পর্যটনে ইকো ট্যুরিজম বাস্তবায়ন করতে টানা চার বছর ধরে প্রান্তিক নারীদের হাত দিয়ে ভিনদেশি উচ্চমূল্যের ফুল চাষ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও)। টিউলিপ ফুল চাষ ঘিরে পর্যটনে নতুনমাত্রা যোগ করেছে উত্তরের পর্যটনের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
এ বছরও টিউলিপের ৯ প্রজাতির ফুল আবাদ করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। টিউলিপ দেখতে ভিড় করতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। পর্যটকের কথা চিন্তা করে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে টিউলিপ উদ্যান।
টিউলিপ বাগান পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজজামান এবং ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার দম্পতি। এখন থেকে দর্শনার্থীরা বাগানে প্রবেশ করে দেখতে পারবেন অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর ভিনদেশি টিউলিপের সমারোহ।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লাইনে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটতে শুরু করেছে বাহারি প্রজাতির টিউলিপ। এবারে চাষ করা ফুলের জাতগুলো হচ্ছে সানি রাজকুমার, পিঙ্ক আর্ডোর, প্যারেড, অক্সফোর্ড, কমলা ভ্যাব বরলশ, ফেরডেক্স, অ্যাপেলডুম, ব্লাশিং এলিট ও মেস্টিক ভ্যান ইউজক। গতবারের জাতগুলো ছিল অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপি), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপি), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)। উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, এসব টিউলিপের সৌন্দর্যে তেঁতুলিয়া হয়ে উঠবে একখন্ড নেদারল্যান্ড, যাইকো ট্যুরিজমে যুক্ত করবে নতুন মাত্রা।
জানা যায়, শীত প্রধান অঞ্চলের ফুল টিউলিপ, যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি নেদারল্যান্ডস’র ফুল নামেও পরিচিত। এটি অর্থনৈতিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ।
জানা গেছে, টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। টিউলিপ মূলত বর্ষজীবী ও শীতপ্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত। এর বীজগুলো ঠিক পিঁয়াজের মতো। রোপণের ২১-২২ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে ফুল এসে যায়।
চাষি রবিউল ইসলাম ও মুর্শিদা খাতুন জানান, চতুর্থবারের মতো এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ আবাদ শুরু হয়েছে। প্রথমবার এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ সাফল্যের পর ধারাবাহিকভাবেই প্রতি বছর শীত মৌসুমে এ ফুলের আবাদ করছেন তারা। প্রান্তিক চাষিদের ফুল চাষে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন ইএসডিও।
ইএসডিও’র হেড অফ ইনক্লুসিভ মাইক্রোফিন্যান্স আইনুল হক বলেন, এবারও ইউএসডিও দর্জিপাড়ায় প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে টিউলিপ ফুলের আবাদ শুরু করা হয়েছে। বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কয়েক ধরনের ফুল ফুটেছে। আগামী জাতীয় দিবস ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রাঙাবে আমাদের টিউলিপ। মুগ্ধ করবে পর্যটকদের।
ইএসডিও’র পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার বলেন, আমরা খুব আনন্দিত যে চতুর্থবারের মতো তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় টিউলিপ চাষ শুরু করতে পেরেছি। আমরা টিউলিপের ব্লাব (বীজ) বপনের উদ্বোধন করেছি। আমরা নারী ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে এ অঞ্চলের প্রান্তিক নারীদের সহযোগিতায় এ বছরও টিউলিপ আবাদ করেছি। আসলে এ ফুল ফোটার পিছনে এখানকার প্রান্তিক নারীদের অবদানই বেশি। তাদের হাতে ফোটা টিউলিপের নজরকাড়া সৌন্দর্য পর্যটকদের মোহিত করছে, আকৃষ্ট করছে। সবাই টিউলিপ দেখে মুগ্ধ হোক। ভ্রমণে হোক, বনভোজনে হোক সবাই যাতে এ ফুল দেখতে পারে তাহলে আমাদের উদ্যোগ সার্থক হবে।
ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে টিউলিপ চাষে চতুর্থবারের মতো আমরা উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ চাষ করছি। তবে এবার একটু দেরি হয়ে গেছে। কারণ নেদারল্যান্ড থেকে ব্লাব (বীজ) এলসি করে আনা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ফুলগুলো অনেক দিন থাকবে। আশা করছি, আগামী দুই মাস এ টিউলিপের রাজসিক সৌন্দর্য ও সৌরভ ছড়াবে দেশে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available