পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সবজি, বোরো ধান ও রবিশস্য চাষ বাদ দিয়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন বেশকিছু কৃষক। বেশি লাভের আশায় তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলোভনে পড়ে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তামাক চাষে জড়িয়ে পড়েন কৃষকেরা। চলতি বছর উপজেলার ৮ হেক্টরের বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কিশোরগাড়ী, বড়শিমুল তলা, বাড়াইপাড়া, ঝালিঙ্গি সহ বেশকিছু এলাকায় তামাকের ক্ষেত। তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিমাত্রার সার-কীটনাশক ও তামাকের রাসায়নিক উপাদান ক্রমেই অন্য জমি ও জলাশয়ের পানিতে মিশে পানিদূষণ করছে। দিন দিন পানি ব্যবহার অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ডিম পাড়ার মৌসুমে কীটনাশকযুক্ত পানির কারণে মাছ বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে। বেশকিছু উর্বর জমি এখন তামাকের দখলে। অথচ, এসব উর্বর জমিতে আগে ভুট্টা, সরিষা, শাকসবজি, বোরো ধানের আবাদ হতো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে ভূমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। তামাক চাষকৃত জমিতে অন্য ফসল সহজে হয় না। ফসলের জন্য হুমকিস্বরূপ এই বিষাক্ত তামাক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক রোপন থেকে শুরু করে পাতা কাটা এবং শুকানো পর্যন্ত এর সকল প্রক্রিয়াতে রয়েছে বিষাক্ত উপাদান। কৃষকরা ভয়াল এ বিষ সম্পর্কে জানার পরেও বাড়তি লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছে। এর পরিচর্যায় কৃষকরা নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের স্ত্রী ও কোমলমতি শিশুদেরও ব্যবহার করছে। ফলে বাড়ছে ক্যানসারসহ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। স্বাস্থ্য ও পরিবেশে ঝুঁকি জেনেও অনেকেই অতিরিক্ত লাভের আশায় তামাক চাষ ছাড়তে পারছে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতার সাথে কাজ করলেও কৃষকের পক্ষ থেকে তামাক চাষ বন্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে অনেকটা বিনা বাধায় স্থানীয় কৃষকদের জিম্মি করে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিবছর তামাক চাষে বিনিয়োগ করে আসছে।
বাঁশকাটার মাহাবুব রহমান নামে এক কৃষক বলেন, তামাক চাষে আসলেই ক্ষতিকর উপাদান আছে। সংসারের অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে তামাক চাষ করতে হয়। ফসলের চেয়ে তামাক চাষ করলে টাকা বেশি পাওয়া যায়। তাই অধিকাংশ কৃষক লাভের আশায় ফসলের পরিবর্তে তামাক চাষ করতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. ফাতেমা কাওসার মিশু জানান, তামাক চাষ আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। এখন শাক সবজি ও রবিশস্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কৃষক তামাক চাষ ছেড়ে অনেকটা ফসলের দিকে ঝুঁকছে। তামাক পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি উপাদান। তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। যারা তামাক চাষ করেন তাদের কৃষি অফিস থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হয় না।
তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের কোন নিয়মিত কর্মশালা হয় কিনা জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এমন কোন কর্মশালা যদিও নেই তার পরেও আমরা কৃষকদের তামাক চাষ থেকে সরে আসতে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। এটি অব্যাহত থাকলে তামাক চাষ একেবারে কমে আসবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available