পঞ্চগড় প্রতিনিধি: তেঁতুলের আচার বা তেঁতুল দেখলে কার না মুখে পানি আসে। এই ফলটির নামেই রয়েছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের একটি উপজেলা তেঁতুলিয়া। কিন্তু তেঁতুলিয়া নামকরণের উৎপত্তি কখন, কিভাবে হয়েছে এর কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এর নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানান শ্রুতি।
বর্তমানে এই প্রান্তিক এলাকাটির চেহারাই পাল্টে গেছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির সমতলের চা বাগান, একাধিক শিল্প-কারখানা ও দেশের একমাত্র চারদেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা রয়েছে। তেঁতুলিয়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্বের তৃতীয় পর্বতশৃঙ্গ হিমালয় খুব নিকট থেকেই দেখা যায়। পর্যটকের ভীড় বেড়েছে। বলতে গেলে তেঁতুলিয়া একটি নগরে পরিণত হয়েছে।
এই তেঁতুলিয়া বাগডোকরার সাথে সংযুক্ত হয়ে মহকুমা গঠিত হয়েছে। ইতিহাস বলছে- ১৮৫৭ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে তৎকালিন রংপুর জেলায় তিনটি নতুন মহকুমার সৃষ্টি করা হয়েছিল। তন্মধ্যে প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে উত্তরতম মহকুমা হিসেব গঠিত হয় তেঁতুলিয়া মহকুমা। এই মহকুমার সাথে সংযুক্ত করা হয় বোদা, সন্ন্যাসীকাটা ও ফকিরগঞ্জ পুলিশ সার্কেলকে।
তেঁতুলিয়া শহরে প্রবেশ করার সময় তেঁতুলিয়া বাজারের প্রধান পাকা সড়কের পাশে চোখে পড়লো বিশাল এক তেঁতুল গাছ। স্থানীয় প্রশাসন গাছের গোড়াটিকে গোল করে টাইলস দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। এতে মানুষজন এখানে বসেই তেঁতুল গাছের ছায়ায় বিশ্রাম বা আড্ডা দিতে দেখা যায়। কিন্তু প্রশ্ন এসেছে তেঁতুল গাছটি বয়স কত?
এই প্রশ্ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলছিলেন এটি আমারও প্রশ্ন। তাই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটা উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছি। তিনি বললেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে তেঁতুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী তেঁতুলগাছটির বয়স নির্ণয় করতে পারবো। পাশাপাশি গাছটিকে প্রাচীনবৃক্ষ হিসাবে চিহিৃত করে এর দেখ-ভালের দায়িত্ব নিয়ে এবং গাছটির যাতে কোনো ক্ষতি করা না হয়, সে জন্য জনসচেনতামূলক একটি বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বলা যেতে পারে জেলা প্রশাসকের এই চিন্তা চেতনা বাস্তবায়িত হলে তেঁতুলিয়ার স্বার্থকতা কিছুটা হলেও প্রকাশ পাবে।
তেঁতুলিয়া নামকরণের উৎপত্তি কখন, কিভাবে হয়েছে এর কোন দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ড. নাজমুল হক রচিত 'পঞ্চগড় ইতিহাস ও লোক ঐতিহ্য' গ্রন্থে বলা হয়, কোচবিহারের রাজা যেসব প্রজা খাজনা দিতে পারতো না তাদেরকে এই স্থানের তেঁতুল গাছের তলায় নিয়ে আসতো। খাজনা দিতে অক্ষম প্রজাদের নিকট হতে টাকার পরিবর্তে প্রতীকী বাজনাস্বরূপ তেঁতুলের বীজ গ্রহণ করা হতো।
অনেকের ধারণা, কোচবিহারের মহারাণী তেঁতুল পছন্দ করতেন। রাজার নির্দেশে প্রজারা নিয়ে আসতো অজস্র তেঁতুল। রাণী খুশি হয়ে মওকুফ করে দিতেন সেই সব প্রজার খাজনা। অপরদিকে জনশ্রুতি রয়েছে, ডাকবাংলোর উঁচু টিলার উপর বাস করতেন একজন বিশিষ্ট বণিক। তার বাবার নাম ছিল 'টিটু'। সেই বণিকের বাবার নাম 'টিটু' অথবা 'তেঁতুল' থেকে এই জনপদের নামকরণ 'তেঁতুলিয়া' হতে পারে বলে প্রচলিত লৌকিক গল্প হতে জানা যায়।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রাচীনকাল হতে তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। স্থল ও নৌপথে তেঁতুলিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বেশ উন্নত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে শিল্প বাণিজ্য ও নদী বন্দর হিসেবে ধীরে ধীরে তেঁতুলিয়া হয়ে উঠে সুবিখ্যাত। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় পঞ্চগড় জেলার প্রাচীন সড়কগুলোর মধ্যে বিখ্যাত সড়ক হল রায়গঞ্জ, জলপাইগুড়ি-দার্জিলিং রোড (বর্তমানে বাংলাদেশ অংশের তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা রোড)। এটি এক সময় গ্যাঞ্জেস-দার্জিলিং রোড নামেও পরিচিত ছিল। ভারতে রেলপথ নির্মাণের পূর্বে এটিই ছিল কলকাতা থেকে দার্জিলিং যাওয়ার অন্যতম প্রধান সড়ক। প্রাচীনকালের এই সড়ক পথ ও নদী বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাণিজ্য কেন্দ্র থেকেই ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয় তেঁতুলিয়া।
তেঁতুলিয়া অঞ্চলের প্রাচীনকালের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, এই ভূখন্ড প্রাচীনকালে প্রাগজ্যোতিষ, কামরূপ, রত্নপীঠ, সৌমারপীঠ, পুন্ড্রবর্ধন এবং মধ্যযুগে কোচবিহার রাজ্যের অবিচ্ছিন্ন অংশ ছিল। কোচবিহার রাজ্যের পুন্ড্র জনপদটি বিহার রাজ্যের কুশী বা কৌশিক নদী ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী ভূ-ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং সমগ্র উত্তরবঙ্গ ছিল এর অধীনে। যার নিদর্শন স্বরূপ চতুর্দশ শতাব্দীর গৌড়েশ্বর সেকান্দার শাহ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর হোসেন শাহী মুদ্রায় 'কামরূপ' ও 'কামতা' দু'টি দেশের নাম লেখা পাওয়া যায় ।
এ ছাড়াও তৎকালীন রচিত আইন-ই-আকবরী' ও বাহরিস্তান-ই-গাইবী' গ্রন্থে কোচ' দেশের মধ্যে কামতা এবং কামরূপ রাজ্যের নাম উল্লেখ রয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রচিত শাহনামা'তে কামরূপ রাজ্যের পশ্চিমার্ধের নাম 'কামতার' পরিবর্তে 'কোচবিহার' এবং পূর্বাঞ্চলের 'কামরূপ' এর স্থলে 'কোচ' এবং 'হাজো' নামের উল্লেখ রয়েছে।
বস্তুত, 'কামরূপ' বিভক্ত ছিল চারভাগে- রত্নপীঠ, কামপীঠ, স্বর্ণপীঠ এবং সৌমারপীঠ। ইতিহাস অনুযায়ী যে স্থানের নাম সৌমারপীঠ সেটিই মূলত 'কামতা' রাজ্য। পঞ্চদশ শতকের প্রথম ভাগে সেন বংশীয় রাজা নীলধ্বজ স্থাপন করেছিলেন এই 'কামতা' রাজ্য। রাজা 'নীলধ্বজ' তেঁতুলিয়ার দেবনগরে একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সে সময় তেঁতুলিয়ার ভজনপুর অঞ্চল থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত পাল, সেন ও মুসলমান শাসনামলে ছিল গৌড় (মোঘল) রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল।
প্রাচীন এ অঞ্চলে (এক সময়ের রংপুর জেলা ও ভারত ভাগের পরে সাবেক দিনাজপুর জেলা এবং আধুনিককালের পঞ্চগড় জেলা) কোচ অধিবাসী বসবাস করতো। তারা ঐতিহাসিক কালে ছিল উত্তরবঙ্গ বিজেতা মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠী। এরপর ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানী ক্ষমতা লাভ করে। অতঃপর ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত পশ্চিমার্ধের অঞ্চল কামতা-কে 'কোচবিহার' (অর্থ: কোচ জাতির বাসস্থান) নামে নামকরণ করা হয়। এই প্রাচীন জনপদটি প্রায় চারশত বছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোচবিহার রাজ্যের শাসনাধীন ছিল।
প্রশাসনিক ইতিবৃত্ত অনুযায়ী আধুনিক যুগ শুরু হওয়ার পর কোচবিহার রাজার শাসনাধীন সময়ে (মোঘল আমলে) 'ফকিরকুন্ডি' নামক ফৌজদারী অঞ্চলকে রংপুর' জেলায় রূপান্তরিত করা হয়। প্রশাসনিক সুবিধার্থে রংপুর জেলার আওতায় নেয়া হয় তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, বোদা, ও দেবীগঞ্জ এই ৪টি থানাকে। পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে এসে সিকিম রাজ্য তেঁতুলিয়া ও শিলিগুড়ি অঞ্চল দখল করে নেয়। পরবর্তী এক শতাব্দীকাল তেঁতুলিয়া অঞ্চল ছিল সিকিম রাজ্যের অধীন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে সিকিমের নিকট থেকে এই অঞ্চল ছিনিয়ে নেয় প্রতিবেশী পার্বত্য রাজ্য নেপাল। তারা ১৮৫০ সালে তেঁতুলিয়া ও শিলিগুড়িসহ তরাই অঞ্চলের পুরোটাই দখল করে নেয়।
১৮৫৭ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে রংপুর জেলায় তিনটি নতুন মহকুমার সৃষ্টি করা হয়। এ সময় হতে বৃদ্ধি পেতে থাকে তেঁতুলিয়া মহকুমার নদী বন্দরের (পুরাতন হাট) গুরুত্ব। এটিকে কেন্দ্র করে গড়ে বেশ কিছু চমৎকার ঘর-বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও ঘোড়-দৌড়ের মাঠ (শারিয়ালজোত) । নদী পথ (মহানন্দা নদী) দিয়ে আসা যাওয়া করতো মহাজনী নৌকা। নিয়মিত বসানো হতো বাণিজ্য মেলা। সড়ক পথে বর্ধমান রোড হয়ে কলকাতা থেকে কাপড়, ইসলামপুর থেকে আম, পাহাড়ী অঞ্চল দার্জিলিং ও ভুটান থেকে নিয়ে আসা হতো রেশমের বন্ধ, টাঙ্গন হাতি-ঘোড়াসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। হাতি-ঘোড়া বিক্রয়ের জন্য চলে যেতে হতো ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের নেকমরদ হাটে ও আটোয়ারীর আলোয়াখোয়া মেলায়।
১৮৬৪ সালে সংঘটিত হয় ভুটান-ব্রিটিশ যুদ্ধ। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পঞ্চগড় ভূ-খন্ড থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করে। সে সময় তেঁতুলিয়ার নিকটবর্তী সন্ন্যাসীকাটার একটি ছোট ভূখন্ড ছিল ভুটানের দেবরাজার অন্তর্গত। ঐ যুদ্ধে ব্রিটিশরা দখল করে নেয়। তেঁতুলিয়ার পার্শ্ববর্তী ডুয়ার্স অঞ্চল। ডুয়ার্সকে পূর্ব ও পশ্চিম দুই খন্ডে বিভক্ত করা হয়। পশ্চিমাংশ নিয়ে গঠিত হয় 'ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্স' নামে নতুন জেলা। ডুয়ার্স প্রদেশ বিস্তৃত ছিল ভুটান রাজ্য পর্যন্ত। তৎকালীন সময়ে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ১৮৬৬ সালের ১ ডিসেম্বর তারিখে গেজেট নোটিফিকেশনের মধ্যেমে তেঁতুলিয়া মহকুমাকে রংপুর জেলা হতে বিচ্ছিন্ন করে ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্সের সঙ্গে আংশিক যুক্ত করা হলেও সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম একই সঙ্গে নাস্ত করা হয়নি।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৬৭ সালের ১ জানুয়ারি রংপুর হতে তেঁতুলিয়া মহকুমার ফৌজদারী কার্যক্রম ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্সের ডেপুটি কালেক্টরের উপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু দেওয়ানী' ও 'রাজস্ব' ক্ষমতা পূর্বের ন্যায় বহাল থাকে রংপুরের কালেক্টরের উপরেই। ফলে পুনরায় ১৮৬৯ সালের ১ জানুয়ারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ও রাজস্ব সংক্রান্ত কাজে তেঁতুলিয়া মহকুমার ফকিরগঞ্জ, বোদা ও সন্ন্যাসীকাটা পুলিশ সার্কেলকে ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্সের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। একই সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রেগুলেশন, ১৭৯৩ অনুযায়ী তেঁতুলিয়া, দেবীগঞ্জ, বোদা, ফকিরগঞ্জ, সন্ন্যাসীকাটা, বৈকুণ্ঠপুর, আলিপুর দুয়ার এবং ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্স অঞ্চলকে একত্রিত করে গঠন করা হয় 'জলপাইগুড়ি জেলা। যার প্রাচীন নাম ছিল বৈকুণ্ঠপুর।
পরের বছর ১৮৭০ সালের ১ এপ্রিল পুনরায় গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তেঁতুলিয়া মহকুমার প্রশাসনিক ক্ষমতা বিলুপ্ত করে চূড়ান্ত ভাবে জলপাইগুড়ি জেলা কালেক্টরেটের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। রংপুর জেলার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে প্রশাসনিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এবং কাছাকাছি জেলা হিসেবে জলপাইগুড়ির নব উত্থানের কারণে দ্রুত হ্রাস পায় তেঁতুলিয়ার প্রশাসনিক গুরুত্ব। একই সময়ে ম্যালেরিয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। ফলে শহর হিসেবে গড়ে উঠা তেঁতুলিয়া বন্দর নগরটি হয়ে পড়ে অস্বাস্থ্যকর এবং জনশূন্য। কেবলমাত্র রয়ে যায় একটি পুলিশ আউটপোস্ট।
অতঃপর জনমানবহীন তেঁতুলিয়া ১৯১১ সাল পর্যন্ত যুক্ত থাকে জলপাইগুড়ি জেলার 'রাজগঞ্জ" থানার সঙ্গে। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে তেঁতুলিয়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ থানা স্থাপন করা হয়। মূলত, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তেঁতুলিয়া অঞ্চলটি মগধ, অযোধ্যা, বিহার, নেপাল, সিকিম, ভুটান, তিব্বত, আসাম রাজ্যের নিকটবর্তী ও সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই ভূখন্ড প্রাচীনকাল থেকেই যথাক্রমে প্রাগজ্যোতিষ-কামরূপ-কামতা-গৌড়-কোচবিহার-দিল্লীর সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশদের অধীনে শাসিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। ব্রিটিশদের ১৯০ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। এ সময় তেঁতুলিয়া থানা জলপাইগুড়ি জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি মারোয়াড়ীদের প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। বর্তমানে তেঁতুলিয়া
এলাকার জমিজমার সকল পুরানো দলিল জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর হিসাবে স্থানীয় অনেক পুরানো পরিবারের বাপ দাদার প্রমাণ বহন করছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দেশ ভাগের সময় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সীমা নির্ধারণ কার্যক্রম "র্যার্ডক্লিফ লাইন" অনুযায়ী তেঁতুলিয়া থানাকে পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি তেঁতুলিয়া, বোদা, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড় ও আটোয়ারী এই ৫টি থানাকে একত্রিত করে গঠিত হয় 'পঞ্চগড় মহকুমা'। এরপর ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল তেঁতুলিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, বোদা, আটোয়ারী ও দেবীগঞ্জ এই ৫টি উপজেলা নিয়ে 'পঞ্চগড় জেলা গঠিত হয়।
তেঁতুলিয়া বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ হিসাবে বারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির বিএনপির প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা। তিনি দুই দফা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ম্পিকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের প্রায় সব জনপদ দখল করে নিলেও মূলত সীমান্তবর্তী কিছু জনপদে পৌছাতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ এলাকাগুলো পরিচিত ছিল 'মুক্তাঞ্চল' নামে। মুক্তিযুদ্ধে তেঁতুলিয়া ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন। ঐ সময় বাংলাদেশে যে কয়েকটি অঞ্চল মুক্ত ছিল তার মধ্যে তেঁতুলিয়া অন্যতম। তেঁতুলিয়াগামী মহাসড়কের অমরখানা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত চাওয়াই নদীর (ভারত ও বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত) ওপর নির্মিত সেতুটি (অমরখানা ব্রীজ নামে পরিচিত) ডায়নামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ায় পাকবাহিনী তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে, মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা তেঁতুলিয়া ছিল সম্পূর্ণ মুক্তাঞ্চল । অমরখানার চাওয়াই নদীর পাশে স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল নামে পরিচিত।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available