জাহাঙ্গীর হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার শাহ গাজী,কালু ও চম্পাবতীর পরিচয় নিয়ে আছে নানা কিংবদন্তী ইতিহাস। জনশ্রুতি আছে বৈরাগ নগরের শাসক দরবেশ শাহ সিকান্দারের পুত্র শাহ গাজী। কালু ছিলেন শাহ সিকান্দারের পোষ্য পুত্র। আর চম্পাবতী ছিলেন সাপাই নগরের সামান্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার কন্যা। এক পর্যায়ে শাহ গাজীর সাথে চম্পাবতির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তাদের মিলনের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক ও ধর্মীয় বাধা। কিন্তু শাহ গাজী কালুর খন্ড খন্ড যুদ্ধে রাজা মুকুট রায়কে পরাজিত করে চম্পাবতীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজারে। মৃত্যু পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিলেন।
বারবাজার ইউনিয়নের বাদুরগাছা গ্রামে শ্রীরাম রাজার বীর দীঘির দক্ষিণ পাশে তিনটি পাশাপাশি কবরের অবস্থান। পশ্চিম দিকের কবরটি কালুর। পূর্ব পাশের কবরটি চম্পাবতীর এবং মাঝখানের কবরটি গাজীর কবর বলে পরিচিত।
৩টি মাজারের সামনে দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি বড় বটবৃক্ষ। এখনে হিন্দু মুসলিম ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ মানত করে রোগমুক্তির আসায়। বটগাছের লতায় বেধে দেয় পলিথিন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শেষ বৃহষ্পতিবার বসে মেলা-ওরস। জড়ো হয় দূর-দুরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ।
ঝিনাইদহ জেলার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে যশোর মহর হতে ১১ মাইল উত্তরে বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার অন্তর্গত কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বারবাজার অঞ্চলে যে সকল আধ্যাত্মিক সাধক ইসলাম প্রচারে অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে গাজী, কালু ও চম্পাবতী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালম আজাদ জানান, ঐতিহাসিক স্থান গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজার। এখানে অনেক ভক্ত সাধক আসে প্রতিনিয়ত। ১৯৯১ সালে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মাজারটি সংরক্ষণ করা হলেও লোকজেনের বসার জন্য ছিল না কোনও স্থান। এছাড়াও প্রতি বছর এখানে ওরস এবং মেলা বসে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, ভক্তদের কথা চিন্তা করে মাজারের সংলগ্ন একটি পাকা বিল্ডিং তৈরি করেছেন। এছাড়াও মাজারটি সংরক্ষিত করতে চারিপাশে প্রাচীর করে দিয়েছেন। প্রতিনিয়ত এখানে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা বেড়াতে আসেন। গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজারের উত্তর পাশে রয়েছে শ্রীরাম রাজার দীঘিটি। চারিপাশে পানি আর মাঝখানে দ্বীপ। এখানে আসলে মাজার দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে দীঘিটির সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available