আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মারা গেছেন। ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) হাসপাতালে তিনি মারা যান। খবর: এনডিটিভির।
এনডিটিভি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে মনমোহন সিংয়ের শারীরিক অবস্থার আকস্মিক অবনতি হয়। স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এক বিবৃতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মনমোহন সিংকে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই নিজ বাড়িতে চেতনা হারিয়ে ফেলেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার চেতনা আর ফেরানো যায়নি। পরে রাত ৯টা ৫১মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) সরকারের টানা দুই মেয়াদে (২০০৪ থেকে ২০১৪) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। গত কয়েক মাসে তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
প্রবীণ এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
ভারতের একমাত্র অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মনমোহন সিং ভারতের প্রথম অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র। মনমোহনের জন্মস্থান বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলার গ্রাম গাহ। জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।
চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে প্রথমে স্নাতক এবং ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন মনমোহন। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক, তারপর ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ থেকে ডি’ফিল করেন তিনি।
এরপর ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত একটানা জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখায় কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে মনমোহন শুরু করেন শিক্ষকতা। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে যোগ দেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন। ১৯৭৬ সালে হন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসচিব।
১৯৮২ সালে মনমোহনকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর করা হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন।
১৯৮৭ সালে অর্থনীতি বিষয়ক স্বাধীন সংস্থা সাউথ কমিশনের মহাসচিব পদে বসেন মনমোহন। সেখানেই ১৯৯০ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালের মার্চে তিনি ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন (ইউজিসি)-র চেয়ারম্যান পদে বসেন।
১৯৯১ সালের জুন মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও তার সরকারে মনমোহনকে অর্থমন্ত্রী করেন। স্বাধীন ভারতের অর্থনীতির ইতিহাসে সেটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি। ১৯৯১ সালে কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পর কংগ্রেসের হয়ে প্রথমবার রাজ্যসভা সদস্য নির্বাচিত হন মনমোহন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান তিনি। ১৯৯৯ সালে একবার লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি।
২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর কংগ্রেস সরকার তৈরি করার মতো জায়গায় পৌঁছয়। কিন্তু ‘বিদেশি’ বিতর্কের আবহে প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। বিকল্প হিসেবে সামনে আসে মনমোহন এবং প্রণবের নাম। কংগ্রেস সভানেত্রীর সমর্থন ছিল মনমোহনের দিকে।
২০০৪ সালে তিনি ভারতের ১৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কংগ্রেস জোটের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মনমোহন।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৫১মিনিটে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে (এআইআইএমএস) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available