আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হোয়াইট হাউসের দাবি প্রত্যাখ্যান করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ২.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান ও ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিভিত্তিক তহবিল স্থগিত করেছে। খবর বিবিসির।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আজ হার্ভার্ডের বিবৃতি আমাদের দেশের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিদ্যমান উদ্বেগজনক এক ধরনের ‘অধিকারবোধ’-এর প্রমাণ দেয়।’
হোয়াইট হাউস গত সপ্তাহে হার্ভার্ডকে দাবির একটি তালিকা পাঠিয়েছিল, যা ক্যাম্পাসে ইহুদি বিরোধিতা মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো, নিয়োগ নীতি ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের দাবি ছিল।
তবে স্থানীয় সময় ১৪ এপ্রিল সোমবার হার্ভার্ড প্রশাসন এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, এইসব পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করার প্রচেষ্টা।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে এক চিঠিতে লিখেছেন, হোয়াইট হাউস গত শুক্রবার আরও বিস্তৃত দাবি ও সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল যে, এইসব মানতে না চাইলে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক বন্ধ করে দেবে।
তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আইনজীবীর মাধ্যমে প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছি যে, আমরা এই প্রস্তাবিত চুক্তি গ্রহণ করব না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অধিকার ত্যাগ করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ইহুদি বিরোধিতার বিরুদ্ধে লড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব হলেও সরকারের এই হস্তক্ষেপ অতিরিক্ত।
হোয়াইট হাউসের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল :
* আমেরিকান মূল্যবোধে ‘শত্রুতামূলক’ আচরণকারীদের সরকারকে রিপোর্ট করা
* প্রতিটি বিভাগে মতবাদের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা
* সরকার অনুমোদিত বাহ্যিক সংস্থা দিয়ে ইহুদি বিরোধিতা প্রচারের অভিযোগ তদন্ত করা
* ক্যাম্পাসে দুই বছরের মধ্যে হওয়া বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া
* বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইভার্সিটি, ইকুইটি ও ইনক্লুশন (ডিইআই) নীতিমালা বাতিল করা
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইহুদি বিরোধিতা বন্ধ এবং বৈচিত্র্য নীতির বিরোধিতা নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে কংগ্রেসের এক শুনানিতে হার্ভার্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লডিন গে প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি বলেন, ইহুদিদের হত্যার আহ্বান ঘৃণ্য হলেও সেটি প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না, তা বিবেচ্য। পরে তিনি ক্ষমা চান, কিন্তু প্লেজিয়ারিজম (চৌর্যবৃত্তি) সংক্রান্ত অভিযোগসহ নানা বিতর্কে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।
এর আগে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিলও একই কারণে স্থগিত করা হয়েছিল। ওই বিশ্ববিদ্যালয় পরে হোয়াইট হাউসের কিছু দাবি মেনে নেওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সোমবার কলাম্বিয়ার একজন ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকারীর আইনজীবী জানান, মার্কিন নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তাকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আটক করে। তার নাম মোহসেন মাহদাওয়ি, যিনি গ্রিন কার্ডধারী এবং আগামী মাসে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে যাচ্ছিলেন।
সম্প্রতি টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আন্দোলনকারীরাও সরকারের হাতে আটক হয়েছেন।
এই ঘটনা মার্কিন উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available