চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে উগ্রবাদী ইসকন সমর্থকদের সহিংসতা ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতি গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা অব্যাহতি চেয়েছেন।
সেই সাথে তারা ওই ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনেরও দাবি জানিয়েছেন। কমিটির প্রধান সাবেক মহানগর পিপি আবদুস সাত্তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করে জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে দেয়া চিঠিতে কমিটি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। এর আগে কমিটির সদস্যসচিবসহ চার সদস্য অব্যাহতি চেয়ে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে কমিটির প্রধান আবদুস সাত্তার বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও আইনজীবী হত্যার ঘটনার পর সমিতি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যসচিব কাশেম কামালসহ সব সদস্য ইতিমধ্যে অব্যাহতি চেয়েছেন। আমরা মনে করি, জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারক দিয়ে আলোচিত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। আইনজীবীদের পক্ষে এই ঘটনার তদন্ত করা যাবে না। ঘটনার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রশাসন ও আদালতের কর্মকর্তারাও সম্পৃক্ত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, ওইদিনের সহিংসতার ঘটনার অনেক প্রশ্নেরই এখনও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। কেন চিন্ময় দাসের মামলার শুনানি দ্রুত শেষ করা হয়নি, সহিংসতার বিষয়ে আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, প্রিজন ভ্যানে চিন্ময়ের কাছে পুলিশের হ্যান্ডমাইক কীভাবে গেল, পুলিশ হেফাজতে কীভাবে তিনি বক্তব্য দেন, উসকানিমূলক স্লোগান কারা দিয়েছিল, ঘটনার শুরুতে কেন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, টানা চার ঘণ্টা কেন প্রিজন ভ্যানটি আদালত এলাকায় অরক্ষিত পড়েছিল এসব বিষয় যথাযথ তদন্ত করে দায়ীদের শনাক্ত করতে হবে।
আবদুস সাত্তার বলেন, ইতোমধ্যে ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এসব বিষয় তদন্ত করছে। আইনজীবীদের তদন্তের চেয়ে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার কাউকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। আর তাতে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে।
আইনজীবী সমিতির নেতারা জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যদের অব্যাহতি চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আজ ২২ ডিসেম্বর রোববার সভায় আলোচনা হবে। সেখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে নৈরাজ্য চালায় ইসকন সমর্থকেরা। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেফতার হন ৪০ জন। তাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেফতার রয়েছেন।
১০ আসামির মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তারা ১৫ থেকে ২০ জন মারধর করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available