নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার লকডাউনে ঢাকায় আমরা তখন গৃহবন্দী। এই বন্দিদশা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে গিয়ে কিছু সৃজনশীল বন্ধু ফেসবুকে এসএসসির গ্রুপ খোলে। সারাদেশে যারা ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেছে তাদেরকে নিয়ে বন্ধুত্বের বিশাল প্লাটফর্ম। শুরুতে আমি যোগ না দিলেও মাঝপথে যোগ দেই। কিন্তু বিশাল প্লাটফর্মে পরিচিতি পাওয়া এত সহজ নয়! শুরু করি লেখালেখি। কখনও নিজের শৈশব নিয়ে, কখনও জ্ঞানের জগত নিয়ে, কখনোবা ইতিহাস, সাম্প্রতিক ঘটনা, রঙ্গরস, গল্প কিংবা রসবোধ নিয়ে। এতে করে খুব তাড়াতাড়ি আমি সারাদেশের বন্ধুদের মাঝে পরিচিত হয়ে উঠি।
প্রথমদিকে পত্রিকায় পশাগত রিপোর্টিংয়ের ব্যস্ততায় খুব একটা সময় পেতাম না। এর মধ্যে হঠাৎ করেই বিশ্ব ব্যাংকের একটা প্রকল্পে সিনিয়র কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া কনসালটেন্ট হিসাবে জয়েন করি। সেখানে ভালো পারফরম্যান্স করতে গিয়ে পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দেই। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অফিস। বিকেল পাঁচটার পরে বাসায় ফিরে একটা লেখার নেশায় অস্থির হয়ে উঠি। প্রায় ২৫ বছর সাংবাদিকতার পেশায় রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেছি। বিকালের পর থেকে লিখতে হয়। প্রথম দিকে ছিলাম অপরাধ বিষয়ক (ক্রাইম) রিপোর্টার। ক্রাইম রিপোর্টার মানে কোনো টাইমফ্রেম নেই। ক্রাইম সংঘটনের যেমন নির্ধারিত টাইম নেই, ক্রাইম রিপোর্টারদেরও কোনো টাইম-টেবিল নেই। সকাল থেকে শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, আর বিকেলের পর থেকে রিপোর্ট লেখা। এরপর মধ্যরাত পর্যন্ত একটার পর একটা রিপোর্ট লেখা। পরে কাঁধে এসে পড়ে চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব। এখানেও পত্রিকা ছাপা শুরু না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব।
দীর্ঘদিন রাতকেন্দ্রিক এমন ব্যস্ততার পর হঠাৎ করে বিকেলের পর ফ্রি সময়টা আমার কাছে অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। সময়গুলো যেন কাটতেই চাইতো না। সেই অস্বস্তি কাটাতে বন্ধুদের গ্রুপে লেখালেখি শুরু করি। তাতে মনে কিছুটা হলে স্বস্তি ফিরে পাই। এই বইয়ের লেখাগুলো বন্ধুদের গ্রুপেই লেখা। সে হিসেবে লেখাগুলো প্রকাশিত বটে। অনেক রকমের লেখার মধ্যে ছোট ছোট গল্প, কল্পনা বিলাস, নিজের শৈশব, কৈশোর, যৌবন, একাডেমি লাইফের টিউশনির গল্প, রঙ্গরস, বিজ্ঞান, ইতিহাস, মানবিকতার গল্পকাহিনী সবই উঠে এসেছে আমার কাঁচা হাতের লেখনীতে। তবে সবগুলো ঘটনা যে সত্য বা আমার নিজের ঘটনা তা ভাবার কোনো কারণ নেই। এর মধ্যে কল্পনার অনেক কিছু আছে। বন্ধুরা যেমন লেখা পছন্দ করতো তেমনটাই লেখার চেষ্টা করেছি। বিনিময়ে পেয়েছি অনেক লাইক-কমেন্ট। বন্ধুদের উৎসাহেই মূলত লেখাগুলো বই আকারে ছাপানোর প্রয়াস। বিশেষ করে, আমার শৈশবের বন্ধু রংপুর রবার্টসন্সগন্জ স্কুলের সহপাঠী জহির রায়হানের উৎসাহে যেসব লেখা বন্ধু মহলে জনপ্রিয় সেগুলো বই আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেই। স্বরবৃত্ত প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী স্নেহভাজন রহমতুল্লাহও আমার লেখা পড়ে বইটি প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়ে আমাকে আরও একধাপ এগিয়ে দেয়।
বন্ধুদের গ্রুপে লেখালেখি করে সারাদেশের হাজার হাজার এসএসসি-৮৭'র বন্ধুর উৎসাহ ও সাড়া না পেলে হয়তো আমার কলম বেশিদূর এগুতো না। এজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে, বন্ধু পুলক কান্তি বড়ুয়া প্রথম দিকে আমার একট লেখা পড়ে কমেন্ট করেছিল, ‘তুই ব্রিলিয়ান্ট!’ পুলকের মতো একজন গুণী লেখকের ছোট্ট সেই কমেন্ট আমার লেখার মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ, তখনও তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়নি। যদিও এখন সে আমার অতি প্রিয় ও কাছের বন্ধু।
বইয়ের গল্পগুলো পড়ে যেহেতু বন্ধুদের ভালো লেগেছে। আমার বিশ্বাস, এগুলো সব বয়সের পাঠকেরও ভালো লাগবে। আমি চেষ্টা করেছি প্রতিটি গল্প বা নিবন্ধে একটা মেসেজ বা বার্তা দেয়ার, যা আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তারপরেও অনেক ঘাটতি আছে, থাকবে। কারণ, পৃথিবীতে কোনো মানুষই পরিপূর্ণ নয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। বইটির একটা গল্প যদি কারও ভালো লাগে, তাতেই আমি সার্থক!
ফেসবুকে লিখলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। কিন্তু বইয়ের পাতায় লিখলে একমাত্র প্রকাশক ছাড়া সরাসরি কারও প্রতিক্রিয়া পাওয়া দুষ্কর। প্রকাশকের প্রতিক্রিয়া বইটি বিক্রির উপর নির্ভরশীল। বিক্রি ভালো তো প্রকাশকের মন ভালো! বিক্রি ভালো না হলেই শুনতে হবে- ভাই, হাবিজাবি এ সব কী লিখলেন? পাবলিক তো খায় না!
হ্যাঁ, এই পাবলিককে খাওয়ানোই একজন লেখকের জন্য বড় চ্যালেন্জ!
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available