নিজস্ব প্রতিবেদক: তামাক কোম্পানির অপপ্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ১৪ জন অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছে। সরকার সম্প্রতি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের করার উদ্যোগ নেয়ার পর, তা ব্যাহত করতে সিগারেট কোম্পানি রাজস্ব ও কর্মসংস্থানের ক্ষতি হবে বলে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানির এ ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তারা।
২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি’র পক্ষ থেকে এ বিবৃতি পাঠানো হয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক হতে রাজস্ব ছিল ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬ এ রাজস্ব আদায় হয় ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যখন আইনটি সংশোধন হয়, সে বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। আইন পাস ও আইন আরো শক্তিশালী করার পরও, কর বৃদ্ধির ফলে গত ১৮ বছরে তামাক থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ গুণ। যদিও ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশে তামাক ব্যবহার প্রায় ১৮% কমেছে (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে)। অতএব এটা পরিষ্কার যে তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে রাজস্ব বাড়ে এবং তামাক ব্যবহার কমার মাধ্যমে রোগ ও মৃত্যু কমে।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন হলে দেশে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আরও একটি মিথ্যাচার চালাচ্ছে তামাক কোম্পানি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর তথ্য অনুসারে দেশে বিড়ি কোম্পানিতে শ্রমিক নিয়োজিত আছে মাত্র ৪৬ হাজার। আর দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে দুই বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি বিএটিবি ও জেটিআই। তামাক কোম্পানির প্রতিবেদন অনুসারে তাদের কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ১৭৬৯ জন (বিএটিবির ১,৬৬৯ জন এবং জেটিআইয়ের প্রায় ১০০ জন)। অতএব সিগারেট কোম্পানিগুলো ৭০ লক্ষ লোক কাজ হারাবে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ দুই কোম্পানি বিভিন্ন পণ্যের দোকানী, যারা অন্যান্য পণ্যের সাথে সিগারেট বিক্রি করে, তাদের নিজের কর্মী হিসেবে দেখিয়ে এই মিথ্যাচার করছে।
তারা বলেন, তামাক কোম্পানি এইসব মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছে। শিশু-কিশোরদের ধূমপানের নেশায় আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান তৈরি করে দিচ্ছে, বিক্রয় স্থলে আগ্রাসী বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, দেশে ভেপিং ও ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়াতে যুবকদের নিয়ে গোপনে ভেপিং মেলার আয়োজন করছে। যা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানে আসক্ত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ধ্বংসের পাঁয়তারা।
তামাকের ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে তারা বলেন, দেশে তামাক ব্যবজহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, ১৫ লক্ষাধিক মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। ক্যান্সার সোসাইটি এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৮ সালে দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ছিল ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। দেশে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো ভয়ংকর অসংক্রামক রোগ বেড়েই চলেছে। যার অন্যতম প্রধান কারণ তামাক ব্যবহার। এ সকল রোগের চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে, প্রতিবছর দেশের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এই তথ্য গুলো সিগারেট কোম্পানি আড়াল করতে চায়।
এমতাবস্থায় তারা সিগারেট কোম্পানির এই ভ্রান্ত প্রচারণা থেকে নীতি নির্ধারকদের সতর্ক থাকা এবং দেশের তরুণদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, মানসের সভাপতি, শব্দ সৈনিক অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরী, ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ জাতীয় টাস্কফোর্সের সদস্য ইকবাল মাসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. রুমানা হক, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ, নাটাবের সভাপতি ও চিকিৎসক ডা. সামনুন ফারুক তাহা, সিটিজেন নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বকুল, পাবলিক হেলথ ল-ইয়ার্স নেটওয়ার্কের সদস্য-সচিব ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, জনস্বাস্থ্য ও ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম হোসেন, স্বাস্থ্য আন্দোলন এর সদস্য-সচিব সীমা দাস সিমু, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মী সুশান্ত কুমার সিনহা এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি এর সদস্য সচিব হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available