নিজস্ব প্রতিবেদক: আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এক সময় ছিলেন শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এই পরিচয়ে তিনি সারাদেশে গড়ে তোলেন অপরাধের নেটওয়ার্ক। এমন কোনো অপরাধ নেই যার সাথে জড়াননি তিনি। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে আঙ্গুল ফুলে বনে গেছেন কলা গাছ। করেছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়।
রাজধানীর গুলশান ও ফেনীর পরশুরামে ছিলো তার আলিশান বাড়ি। যেখানে সুন্দরী রমনীদের নিয়ে রঙ্গ তামাশায় লিপ্ত হতেন। তার যৌন লালসার তালিকায় ছিলেন অভিনেত্রী থেকে শুরু করে নারী নেত্রী ও শিক্ষিকাও। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মদ পান করতেন তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে এবং সেই সাথে নানা রকম ফন্দি ফিকির করতেন। যেকোন উপায়ে কখনো নিজের পরিচয় কখনো শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করতেন।
অনেক নারীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যেতেন দেশের বাইরে। এক নাসিমেরর লালসার শিকার শতাধিক নারী। তার খপ্পরে পড়ে অনেক নারী সর্বশান্ত হয়েছেন। তার প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক নারী সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছেন। লোক লজ্জায় নারীরা তাদের এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানাতে পারেননি। কারণ, স্বামী সন্তান সহ সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে। আর এই সুযোগেই লম্পট আলাউদ্দিন নাসিম নিজের যৌন স্বার্থ চরিতার্থ করেন।
১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জিনাত রিজওয়ানা নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারী। তার দাবি, হবিগঞ্জের ৭৫০ শতাংশ জমি দখল করে আত্নসাতের উদ্দেশ্যে ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও তার ভাই জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ২০২২ সাল থেকে তাকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন।
জিনাত রিজওয়ানার অভিযোগ, ঢাকার উত্তরা এবং সিলেটে তার একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ রয়েছে। ঢাকার উত্তরা এলাকার তিনি একজন অন্যতম শীর্ষ করদাতা। যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও ব্যবসায়িক কাজে তিনি নিয়মিত দেশে আসা যাওয়া করেন। বিদেশে থাকায় একাধিক চক্র তার ব্যবসা ও সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছে বিভিন্ন সময়। না পেরে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এর মধ্যে ২০২২ সালের ৫ জুন উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাজানো মামলা করা হয়। ৬ জুন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসার পর ২৫ জুন ব্যক্তিগত কাজে ভারতে যান এবং ২৮ জুন দেশে ফিরলে বিমানবন্দর থেকে ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একদিন থানা হাজতে রেখে নির্যাতনের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানা হয়। তার দাবি, পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় তার ছবি তুলে সেই ছবি ব্যবহার করে জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পোষ্টার ছাপিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে লাগিয়ে অপপ্রচার করেন। হবিগঞ্জ এলাকার ৭৫০ শতাংশ জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে হয়রানি করা হয় বলেও দাবি করেছেন রিজওয়ানা।
এদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে।
গত রবিবার দুদক চেয়ারম্যান বরাবর জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়- নাসিমের বাড়ি সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম পৌরসভার গুথুমা গ্রামে। তিনি ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার পদবি ব্যবহার করে প্রশাসনে বদলি, টেন্ডার বাণিজ্য, বিদ্যুৎ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। তিনি বিভিন্ন ব্যবসা ও প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন এবং তা বিদেশে পাচার করেছেন। এতে আরও বলা হয়, বালুমহাল, টেন্ডারবাণিজ্য, সালিশিবাণিজ্য, নিয়োগবাণিজ্য ও সীমান্ত থেকে চোরাকারবারি চলত আলাউদ্দিন নাসিমের নির্দেশে। তিনি ‘মিস্টার টোয়েন্টি পার্সেন্ট’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাকে ২০ পার্সেন্ট কমিশন না দিলে কোনো টেন্ডারই পেতেন না ব্যবসায়ীরা।
২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় গাড়িতে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডটি আলাউদ্দিন নাসিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available