নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সন্দ্বীপের মানুষ এতদিন কাদা মাড়িয়ে ডিঙি নৌকায় আর বোটে করে কেন সমুদ্র পারাপার করতে হবে? সন্দ্বীপ দেশের অন্যতম উপকূলীয় দ্বীপ। কিন্তু ৫০ বছরের মধ্যেও কেন নিরাপদ যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি, কী লজ্জার কথা! সন্দ্বীপের সঙ্গে আজ নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপিত হলো। কেন এত দিন হয়নি. সেটা লজ্জার। এ লজ্জা থেকে বাঁচলাম। কলঙ্ক থেকে আজ মুক্ত হলাম।
২৪ মার্চ সোমবার দুপুরে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ৯টায় সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে সমুদ্রপথের প্রথম ফেরি ছেড়ে যায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ার উদ্দেশে। এক ঘণ্টার যাত্রায় ফেরিটি দ্বীপে পৌঁছালে ফেরিঘাটে হাজার খানেক মানুষ একে স্বাগত জানায়।
শুধু সন্দ্বীপের জন্য না পুরো চট্টগ্রামের জন্য আজ আনন্দের দিন মন্তব্য করে ইউনূস বলেন, স্বাধীনতার মাসে আপনাদের এ সুখবর দিতে পেরে আমি আনন্দিত। সন্দ্বীপের এ অগ্রযাত্রা আজ শুরু হলো, আরও সুন্দর হবে। এভাবে সব অঞ্চলের সুষম উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।
এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারে মতো সাগরপথে চালু হয়েছে ফেরি সার্ভিস। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এই ফেরি সেবার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৬ উপদেষ্টা।
তারা হলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। চার লাখ দ্বীপবাসীর বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই ফেরি সেবা অতীতে কয়েকবার চেষ্টা করে সম্ভব হয়নি। তবে সন্দ্বীপের সন্তান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মনোনীত হওয়ার পর থেকে এ কাজে হাত দেন। কয়েকমাসের প্রচেষ্টায় তিনি দ্বীপবাসীর যাতায়াতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন। এখন থেকে বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহন সরাসরি দ্বীপে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বীপের বাসিন্দা বাসিন্দা এহসানুল হক বলেন, এবার সন্দ্বীপবাসীর ঈদেও কাটবে ভিন্নভাবে। দ্বীপবাসীর স্বপ্নের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। এবার লোকজন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সন্দ্বীপে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারবে। এটি কতটা আনন্দের দ্বীপবাসীরাই জানবে।
এর আগে গত ১৯ মার্চ সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া সাগরপথে পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল শুরু হয়। ফেরি ‘কপোতাক্ষ’ নামে ফেরিটি দিয়ে এই সেবা চালু হয়। আজ (সোমবার) একই ফেরি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া ফেরিতে চলাচলের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে- সাধারণ যাত্রী ১০০ টাকা, মোটরসাইকেল ২০০ টাকা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৫০০ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি ৯০০টাকা, বাস ৩ হাজার ৩০০ টাকা, ট্রাক ৩ হাজার ৩৫০টাকা এবং ১০ চাকার গাড়ি ৭ হাজার ১০০ টাকা।
বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান, সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে যাতায়াতে এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মত সময় লাগে। প্রতিদিন যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট চারবার ফেরি চলাচলের কথা আছে। ফেরিতে ৩৫টির মতো যানবাহনের পাশাপাশি ৬০০ জন মানুষ চলাচল করতে পারবে।
এদিকে, ফেরির পাশাপাশি সোমবার থেকে ঢাকা-সন্দ্বীপ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলও উদ্বোধন করেন উপদেষ্টারা। এছাড়া চট্টগ্রামের এয়ারপোর্ট-সি বিচ-নিমতলা-নয়াবাজার-কুমিরা-বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট-সন্দ্বীপ এনাম নাহার মোড় রুটেও এসি বাস সেবা চালু করেছে বিআরটিসি।
ফেরি এবং বিআরটিসি বাস সেবা উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available