নিজস্ব প্রতিবেদক: চার দিনের সরকারি সফর শেষে ২৯ মার্চ শনিবার রাতে চীন থেকে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এ সফরে বাংলাদেশের অর্জন বহুমুখী বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সফল একটি সফর শেষ করলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর সে কারণেই দেশটি (চীন) থেকে বিশাল অংকের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের পাশাপাশি মিলেছে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নেও প্রতিশ্রুতি।
চলুন একনজরে জেনে নিই, ড. ইউনূসের এই সফরে কী কী পেয়েছে বাংলাদেশ?
১. ২১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে সে দেশের সরকার ও চীনা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দেশটির প্রায় ৩০টি কোম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে।
এ ছাড়া মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চীন। চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরও ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে বাকি অর্থ।
২. ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে কোটা ও শুল্ক সুবিধা: বাংলাদেশের বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা আরও দুই বছর বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে চীন। এর আগে চীনা বাজারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে চীনা উপ প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াংয়ের এক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে চীনা উপ প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
৩. চীনে আম রপ্তানি: চীন বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশও চীনে আম পাঠাতে চায়। বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির জন্য ৬ বছর আগে দেশটির কাছে আবেদন করেছিল। তবে নানা জটিলতায় সেটা আর কার্যকর হয়নি।
তবে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মধ্যে দিয়ে সে দেশে আম রপ্তানির দুয়ার খুলেছে। আগামী মে-জুন মাস থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এর মধ্যে দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বাড়বে।
৪. তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা: তিস্তা নদী প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক আগেই থেকে চীনের সহায়তা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে এই প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস মিলেছে।
তবে শুধু তিস্তা প্রকল্প নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি অধ্যাপক ইউনূস। তিনি নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য চীন থেকে ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যানও চেয়েছেন।
৫. চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই: প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের চিরায়ত সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে সই হয়েছে ৮টি সমঝোতা স্মারক।
এর আগে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সফরে গত ২৬ মার্চ চীনে পৌঁছান। সেদিন বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনাসহ উষ্ণ অভ্যর্থনা দেয় দেশটির সরকার। পরদিন ২৭ মার্চ বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ড. ইউনূস। এদিন বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
পরে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগে অংশ নেন ড. ইউনূস। একই স্থানে টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি বিনিয়োগ, বাংলাদেশ টু পয়েন্ট জিরো উৎপাদন ও বাজার সুযোগ, সামাজিক ব্যবসা ও যুব উদ্যোক্তা এবং তিন শূন্যের বিশ্ব–এই তিনটি বিষয়ের ওপর তিনটি গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ ছাড়া ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াং, চীনের পানিসম্পদ মন্ত্রী লি গোইয়িং, রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি ওভারচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) চেয়ারম্যান বান কি-মুন সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available