পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২১ টাকা, বিক্রয় হচ্ছে ৮৫ টাকা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ২০ টাকা। জানুয়ারির মাঝামাঝি যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি, সেসব পেঁয়াজ এখন খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে এবং পাইকারি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৮ থেকে ৭২ টাকা দরে।ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কমতে থাকায় দাম বেড়েছে। আর দাম বৃদ্ধির পেছনে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে বলছে কৃষি বিপণন বিভাগ। এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃষকের ঘর থেকে পিয়াজ প্রতি কেজি কিনছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। কুষ্টিয়ার কৃষি বিপণন বিভাগ বলছে, কৃষকের এবার প্রতি কেজি পিয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ২১ টাকা ২৫ পয়সা।১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে এবং পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। আর কৃষকের ঘর থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনছেন প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার কমতির দিকে গেলেই কৃষকেরা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখছেন। আবার দাম বাড়লে তখন বাজারে আনছেন।এ সময় এই বাজারে আসা ক্রেতা ফরহাদ পারভেজ বলেন, ‘বাজারে প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কয়েকদিন আগে পেঁয়াজ কিনলাম ৬২ টাকায়, সেই পেঁয়াজ এখন ৮০ টাকা। বাজারে আবারও পেঁয়াজের গায়ে আগুন লেগেছে আর জ্বলে পুড়ে মরছি আমরা সাধারণ ক্রেতারা। বাজার মনিটরিং না থাকায় এভাবে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’এ বাজারে খুচরা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আজকে প্রকারভেদে প্রতি কেজি পিয়াজ কিনেছি ৬৮ থেকে ৭২ টাকা আর বিক্রি করছি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে।কৃষকের কাছ থেকে কত টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছেন তার রশিদ দেখতে চাইলে বাজারের পাইকারি বিক্রেতা শাহিন দেখাতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেও পেঁয়াজের আমদানি অনেক ছিল। এখন কম তাই পেঁয়াজের দাম বেশি।বিকালের দিকে শহরের ৬ রাস্তার মোড়ে বাজার করতে আসা রাসেল নামে এক জানান, ‘এইমাত্র পেঁয়াজ কিনলাম ৮৫ টাকা কেজি। কয়েকদিন আগে কিনেছিলাম ৬৫ টাকা কেজি। এসব দেখার কেউ নাই। যার যা ইচ্ছা সে তাই করছে আর ইচ্ছামত দাম বাড়াচ্ছে। বিপদে আছি আমরা সাধারণ মানুষ।’জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, এতে সমানভাবে কৃষকরাও দায়ী। বাজার কমতির দিকে গেলেই তারা পেঁয়াজ উত্তোলন বন্ধ রাখছেন। আবার দাম বাড়লে তখন আমদানি বাড়াচ্ছেন। এছাড়াও বাজারে কিছু দুষ্টু ব্যবসায়ী আছেন, তাদের সাথে কিছু কৃষকের যোগাযোগ আছে। উভয় পক্ষ মিলেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে।তিনি আরও বলেন, এ বছর কৃষকদের প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ হয়েছে ২১ টাকা ২৫ পয়সা। সেখানে কৃষক ৪০ টাকা বিক্রি করলেও বেশ ভালো মুনাফা পেতে পারেন। ব্যবসায়ীদের মুনাফাসহ ভোক্তাদের কাছে ৪৫-৫০ টাকায় পেঁয়াজ পৌঁছানো সম্ভব ছিল। এ অবস্থা চলতে থাকলে সরকার আবারও পেঁয়াজ আমদানির পথে হাঁটবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।এদিকে কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, এবছর পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা থেকেও বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা এই বছর বেশি লাভবান হচ্ছে। প্রতি বিঘায় পিয়াজের উৎপাদন হয় ৫৫ থেকে ৬০ মণ এবং প্রতি বিঘায় কৃষকদের খরচ হয় প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা। এতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ২০ টাকা মতো।দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের (কেপিসি) সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী ও কিছু সিন্ডিকেট কৃষকের যোগ সাজেছে পিয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। পেঁয়াজের উৎপাদন খরচের থেকে কয়েকগুণ বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বাজারে। চাল, সবজি, মাছ-মাংস ও ডিমের পর পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ জীবন যাপন আরও বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে। অচিরেই বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন।