সিঙ্গাপুরের নাগরিক পরিচয়ে বিনিয়োগের সুরক্ষা চাইলেন এস আলম
নিজস্ব প্রতিবেদক: এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রুপটির বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক ব্যবস্থা’ নিচ্ছে দাবি করে সিঙ্গাপুরের নাগরিক ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির আলোকে সুরক্ষা প্রাপ্য বলে মনে করেন তিনি।১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের ফাইনেন্সিয়াল টাইমস পত্রিকা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষে তাদের আইনি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিসি মামলা করতে পারেন।সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ওই পত্রিকাটিতে সাক্ষাৎকার দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি কোটি পাচার করেছে। তার এই সাক্ষাৎকারের পরই সাইফুল আলমের পরিবারের পক্ষে তাদের আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উর্কুহার্ট অ্যান্ড সালিভান এই চিঠি দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।চিঠিতে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক উল্লেখ করে বলা হয়, এ ধরনের বক্তব্য গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক’। তাছাড়া, এসব অভিযোগ ভুল ও মানহানিকর।সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর বলেন, শেখ হাসিনার আমলে তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। তার মধ্যে এস আলম গ্রুপ একাই এক হাজার কোটি ডলার পাচার করেছেন। যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা।এদিকে, সাইফুল আলমের সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্বের বিষয়ে তাদের আইনি প্রতিষ্ঠানের কাছে ফাইনেন্সিয়াল টাইমস জানতে চায়। তবে তাদের আইনি প্রতিষ্ঠানটি তাতে সাড়া দেয়নি। এছাড়া, সিঙ্গাপুর সরকারও পত্রিকাটির অনুরোধে সাড়া দেয়নি। সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা এখনও বাংলাদেশের নাগরিক কি না তা জানা যায়নি।চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তির অধীনে গভর্নরের মন্তব্য বাংলাদেশের মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। ১৯৮০ সালের বাংলাদেশের বিদেশি বেসরকারি আইন অনুযায়ী সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম ও তার পরিবারের অধিকার এবং সুরক্ষা রয়েছে। বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজেদের অধিকার রক্ষায় সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে।এই অভিযোগ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, আমার দাবির শতভাগ ভিত্তি রয়েছে। অনেক বছর ধরে বিভিন্ন ব্যাংকে এসব দুর্নীতি হয়েছে। তার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এটি শেষ হতে সময় লাগবে।বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সাইফুল আলম বাংলাদেশের আইন মেনে বিদেশে বিনিয়োগের কোনো অনুমোদন নেয়নি। দেশের যেই প্রতিষ্ঠানগুলো বৈধভাবে বিদেশে বিনিয়োগ করেছে সে তালিকায় তার নাম নেই।প্রসঙ্গত, সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী ২৫ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার বিনিয়োগ করে দেশটির নাগরিক হওয়া যায়। এ জন্য আবেদনকারীর ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। পাশাপাশি দেশটিতে আরও বিনিয়োগ করতে হয়। তা করতে পারলে সন্তানরা দেশটিতে সরকারি চাকরির সুযোগ পান। তবে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হতে হলে একজন ব্যক্তিকে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়।