• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১ সকাল ০৭:২২:২৪ (08-Sep-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১ সকাল ০৭:২২:২৪ (08-Sep-2024)
  • - ৩৩° সে:

অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের দায়ে রাবি অধ্যাপককে অপসারণের দাবি

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক সভাপতি মুসতাক আহমেদকে অপসারণের দাবি তুলেছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তার বিরুদ্ধে গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা, অর্থ কেলেঙ্কারি, নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও অর্থের বিনিময়ে ছাত্রলীগকে নানাভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেছেন তারা।১ সেপ্টেম্বর রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) তারিকুল হাসান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন শিক্ষার্থীরা।বিভাগীয় ছাত্র কল্যাণ তহবিল, বিভাগ উন্নয়ন ফি ও মিডিয়া ল্যাবের ফান্ড থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন তারা।লিখিত অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় আমাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন। পেশাগত কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমাদের কাছে নানা বিষয়ে তথ্য থাকে। আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য আছে যে, মুসতাক আহমেদ বিভাগের সভাপতির দায়িত্বকালীন বিভাগের বিভিন্ন তহবিল থেকে ৯ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা তছরুফ করেছেন। বিভাগের সভাপতি পরিবর্তন হওয়ার পর তার এই অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে। বিষয়টি অবগত করে নতুন সভাপতি রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও আমরা অবগত হয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি এ টাকা বিভাগের তহবিলে জমা দেবেন মর্মে অঙ্গীকার করে বিষয়টি ফয়সালা করলেও এখনো সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেননি।’লিখিত অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘জুলাই-আগস্ট মাসে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশব্যাপী ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ সংগ্রামে যার যার অবস্থান থেকে বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিল শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন চলাকালে তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের বিপক্ষে একাধিক উস্কানিমূলক ও অনৈতিক ভাষায় পোস্ট দেন, যা এই আন্দোলন দমনে সরকারের পৈশাচিক গণহত্যাকে সমর্থন করে এবং উস্কে দেয়। শহীদ ভাই-বোনদের রক্তস্নাত নতুন বাংলাদেশে তার মতো স্বৈরাচার ও ছাত্রহত্যার দোসর স্যাডিস্টকে শিক্ষক হিসেবে মেনে নিলে আমাদের ভাই-বোনদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করা হবে।’গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একাডেমিক পরিসরে আরও কয়েকটি অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ‘একটা সেমিস্টারে ন্যূনতম যে কয়টি ক্লাস নিতে হয় তা না নিয়ে তিনি পাঁচ থেকে সাতটি ক্লাস নিয়ে কোর্স সমাপ্ত করেন। এ ক্লাসগুলো তিনি রুটিন অনুযায়ী নেন না।’এ বিষয়ে বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী তার একটি বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘স্যার সারা বছর মিলে ক্লাসে আপনার দেখাই তো পাইতাম সর্বোচ্চ ৬-৭ দিন তাও আবার এক/দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে। পরীক্ষায় যে ৮ প্রশ্নের মধ্যে ৪টার উত্তর করা লাগত সেই চারটাও কমপ্লিট হয় না ঠিকভাবে। দিনশেষে পরীক্ষার আগে আপনার ধরিয়ে দেওয়া ওই আটটা প্রশ্নের কয়েকটা পড়েই সবার এক্সাম দেওয়া লাগে। স্যার, এই ৬-৭টা ক্লাস না করলে শিক্ষার্থীদের খুব একটা বড় ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না।’এছাড়াও তার বিরুদ্ধে খাতা মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। তিনি তার অনুগামী শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেন এবং তাদের মাধ্যমে পুরো ব্যাচে নজরদারি চালান। ক্লাসে তিনি হরহামেশাই বলেন, ‘পরীক্ষার নম্বর খাতায় থাকে না, মাথায় থাকে’।এছাড়াও নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘এ অধ্যাপক বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করেন। যা সেই শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা এর বিবরণ এখানে দিচ্ছি না। প্রয়োজনে ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল গালিব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের ভূয়া সনদ দেখিয়ে এই বিভাগে সান্ধ্য কালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিল। পরে এ বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি এক বার্তায় জানায়, গালিব ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থী নয়। অছাত্র গালিব এই অধ্যাপকের সহায়তায় বিভাগের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ছাত্রলীগের পদ গ্রহণ করে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গালিবের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ও হত্যা মামলা রয়েছে।এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, ‘২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জরুরি সভায় গালিবের ভর্তি বাতিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরেও প্রফেসর ড. মুসতাক আহমেদ তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে তাকে ছাত্রলীগের সম্মেলনের ঠিক আগের দিন ওই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর এ পেছনের তারিখ (২৪ আগস্ট ২০২৩) দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ছাত্রত্বের প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। অছাত্র ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দিতে সহায়তা করেন।’এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অধ্যাপক মোসতাক আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে আজ ২ সেপ্টেম্বর সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি বলেন, 'আমার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কোটা সংস্কার বিষয়ে একটা ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিলো। আমি বরাবর বলে আসছি, কোটা পদ্ধতিই আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি নি, করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে চাকরি পর্যন্ত। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতাকে উপর বুলেটের আঘাতে হত্যা করা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। আমার স্ট্যাটাসে আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা কষ্ট পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছে। কোনো মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ভুল বোঝাবুঝি নিজেরা বসে সমাধান করা যায়। যারা বেদনাহত হয়েছেন মার্জনা করবেন।'বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক তারিকুল হাসানের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার সময় এই প্রতিবেদক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করা হলো। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করে অভিযোগপত্রটি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিভাগ সহযোগিতা করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান সম্ভব হবে।