ক্যাম্পাসের ইফতার যেন এক টুকরো প্রশান্তি
তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি: সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়ে, তিতুমীর কলেজের আঙিনায় নেমে আসে এক অন্যরকম আবহ। সন্ধ্যার মৃদু বাতাস, সোনালি আভায় রাঙানো আকাশ আর শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত পদচারণায় ক্যাম্পাস যেন এক নতুন রূপে সেজে ওঠে। ইফতারের আগে পুরো পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এক উষ্ণ সান্নিধ্য, একটুখানি প্রশান্তি খোঁজার আকাঙ্ক্ষা। শহীদ মামুন চত্বর, মুক্তমঞ্চ, পতাকা মঞ্চ—সবখানেই জমে ওঠে আড্ডা, প্রস্তুতি আর ইফতারের আনন্দ।কেউ ব্যস্ত ছোলা-মুড়ি মাখানোর কাজে, কেউ বা ফল কাটতে ব্যস্ত, আবার কেউ শরবত তৈরি করছে। কেউ নিঃশব্দে সবার হাতে ইফতার পৌঁছে দিচ্ছে, যেন একটুও কম না পড়ে। পরিচিত সেই মসজিদের মিনার থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে এলে, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি গলায় ঢেলে ক্লান্তি ভুলে যায় সবাই। যেন সারাদিনের পরিশ্রম নিমেষেই প্রশান্তির ছায়ায় বিলীন হয়ে যায়।তিতুমীর কলেজে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই পরিবার থেকে দূরে থাকেন। রমজানে পরিবারের সঙ্গে ইফতারের যে আনন্দ, তা থেকে বঞ্চিত হন তারা। তবে এই অভাব পূরণ করতে গড়ে ওঠে এক নতুন পরিবার—বন্ধু, সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র সবাই মিলে ইফতারের আয়োজন করেন। বিভিন্ন জেলা ছাত্রকল্যাণ সংগঠন, ক্লাব, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে চলে গণ ইফতার।একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে ইফতার করছিলেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী আহমেদ সাবিত। তিনি বললেন, পড়ালেখার জন্য আমরা পরিবার ছেড়ে ঢাকায় এসেছি। পরিবার ছাড়া ইফতার বিষাদময়, কিন্তু ক্যাম্পাসে যে উষ্ণতা পাই, তা আমাদের একাকীত্বের কষ্ট অনেকটাই কমিয়ে দেয়।রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২১-২২ সেশনের আরেক শিক্ষার্থী জানালেন, পরিবারের সঙ্গে ইফতারের আনন্দ এখানে পাই না ঠিকই, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করে সেই শূন্যতা ভুলে থাকার চেষ্টা করি।তিতুমীরের ইফতার শুধু উপোস ভাঙার আয়োজন নয়, এটি পরিবার থেকে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য প্রশান্তির মুহূর্ত। এখানে ইফতার শুধু খাবার ভাগাভাগি নয়, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর একাত্মতার প্রতীক। রমজানের এই উষ্ণ সন্ধ্যাগুলো ক্যাম্পাস জীবনের মিষ্টি স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে চিরদিন।