দশপাড়ায় খন্দকার ইশতিয়াক বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখল ও সন্ত্রাসীর অভিযোগ
কুমিল্লা প্রতিনিধি: ভয়ংকর জনপদে পরিণত হয়েছে কুমিল্লা দাউদকান্দির সুন্দলপুর ইউনিয়নের আলোচিত দশপাড়া গ্রাম। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, হামলা, মামলা, দখলবাজি কর্মকাণ্ডে আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় অনেকের। এই গ্রামের খন্দকার কবির উদ্দিন আহমেদের বংশধরদের মাঝে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে কোন্দল চলছে । এই কোন্দলকে ঘিরে বিগত ৬ বছর ধরে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটে যাচ্ছে এই এলাকায়।খন্দকার কবির উদ্দিনের ছেলে বাংলাদেশের আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তিত্ব খন্দকার মোশতাক আহমেদ। আর এই খন্দকার মোশতাক আহমেদের ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদের (কানাডায় অবস্থানরত) নির্দেশে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা খন্দকার নাজির আহমেদের সন্তান খন্দকার নাসিরুল কবির ও বিলকিস রাবেয়ার পরিবারের বাড়ি ঘর দখল, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া খন্দকার নাসিরুল কবিরের বোন (বিলকিস রাবেয়া) ও বোনের মেয়ে সিগমা কবিরকে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে। বাড়ি দখল হামলা মামলা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য খন্দকার নাসিরুল কবির সর্বশেষ ৯ সেপ্টেম্বর দাউদকান্দি থানা পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।খন্দকার নাসিরুল কবির জানান, বিগত ছয় বছর ধরে আমার ও আমার বোনের পরিবারের উপর সর্বোচ্চ অত্যাচার বিরাজমান । মাছ চুরি, মোবাইল চুরি, ডাকাতি , নারী নির্যাতন ও আওয়ামীলীগ অফিসে অগ্নি সংযোগের মামলায় আমাকে , আমার বোন বিলকিস রাবেয়া (৭২) এবং বোনের মেয়ে সিগমা কবিরকে আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে ।তিনি জানান, বর্তমানে খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ কানাডা থেকে মুঠোফোনসহ অন্যান্য ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমে তার নির্দেশনায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও দখলবাজি করছে ।নিজেদের নিরাপত্তার রক্ষার্থে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে ৮টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে থাকি। বাটোয়ারা মামলায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, এবং চলতি বছরের ৫ই সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টায় আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি থাকার পরেও, ইশতিয়াকের সন্ত্রাসী বাহিনী একত্রে সীমানা প্রাচীর ভাঙাসহ কোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ডটি ভেঙ্গে ফেলে ।তারা বসতঘরে কোর্টের আদালতের লাগানো তালা ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা, জানালা,আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং বাড়ির আটটি সিসিটিভি ক্যামেরা, সিসিটিভি ডিভিআর বক্স তার সহ লুট করে নিয়ে যায় ।বাড়িতে লাগানো মৃত খন্দকার কবির উদ্দিনের নেমপ্লেট ভেঙ্গে তারা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেমপ্লেট প্রতিস্থাপন করে বাড়িতে তাদের নিজস্ব তালা লাগিয়ে দেয়। ২০ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারা পুনরায় খন্দকার ইশতিয়াকের নির্দেশে এবং সন্ত্রাসী নিজামের নেতৃত্বে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক বাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিষয়টি আমরা সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশকে অবগত করি। সেনাবাহিনী এসে আমাদের জানায়, বাড়ি দখল করতে আসলে আমাদের জানাবেন, আমরা তাদের আইনের আওতায় আনব । কিন্তু শনিবার ২১ই সেপ্টেম্বর সকালে খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদের সন্ত্রাসী বাহিনী পুনরায় এসে আমাদের বাড়ি ঘর দখল করে নেয়।খন্দকার নাসিরুল কবিরের বোনের মেয়ে সিগমা কবির জানান ,কানাডায় পলাতক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ ও তার সন্ত্রাস বাহিনী তারই আপন চাচাতো ভাই বোনদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করছে। বিগত সরকারের আমল থেকে এই পর্যন্ত এ অত্যাচারে খন্দকার নাজির আহমেদের পরিবার অতিষ্ঠ এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ২০২০ সালের খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদের সন্ত্রাস বাহিনীর প্রধান নিজাম ও লাঠিয়াল বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালায় । এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কোর্টে মামলা করি। ইশতিয়াক কানাডায় বসে তার সন্ত্রাস বাহিনীকে টাকা দিয়ে বিগত সরকার আমল থেকে আমাদের ওপর অত্যাচার করার মদদ দিয়ে যাচ্ছে । তাদের হুমকির কারণে আমরা থানায় একাধিকবার জিডি করি। আমাদের ওপর বিভিন্ন মিথ্যা মামলা যেমন ডাকাতি মামলা, আওয়ামী লীগ অফিস পোড়ানো মামলা, মোবাইল চুরি ছিনতাই মামলা, নারী নির্যাতন মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্তা করছে। খন্দকার ইশতিয়াকের মিথ্যা মামলার প্রমাণস্বরূপ কল রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। যে মহিলাকে (আমিনা খাতুন) দিয়ে ইশতিয়াক নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেছেন তার কল রেকর্ডও আমাদের কাছে আছে ।যা কোর্টে উপস্থাপন করার পর আদালতের মাননীয় বিচারক দুটি মামলা খারিজ করে দেন। আমরা একাধিকবার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেও কোনো আশানুরূপ ফলাফল পাইনি।সিগমা কবির আরো জানান, আদালতের জারি করা আদেশের পরও আমাদের বাড়িতে খন্দকার ইশতিয়াকের সন্ত্রাস বাহিনী প্রধান নিজামসহ ওয়াহিদ ফকির, শামসুদ্দিন, রাজ্জাক, জিকু, সাকিবসহ অনেকে আমার মামা নাসিরুল কবিরের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। দিনের পর দিন মিথ্যা মামলাসহ, সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে খন্দকার নাজির আহমেদের পরিবার আজ দিশেহারা। কোথায় গেলে এই পরিবারের সদস্যরা ন্যায্য অধিকার সহ নিরাপত্তা খুঁজে পাবে তা জানা নেই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই সরকারের লোকজনের সহায়তায় বেপরোয়া এই সন্ত্রাসী বাহিনী। মহিলাদের নামে আওয়ামী লীগ অফিস পোড়ানোর মামলা দেওয়া হয়েছে। ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধ সাবেক শিক্ষক বিলকিস রাবেয়ার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে নারী নির্যাতন ও ডাকাতি মামলা। যা লজ্জাজনক ঘটনা।এই সন্ত্রাসী বাহিনী আদালতের নির্দেশনাও মানছে না। বিগত ৬ বছর ধরে প্রশাসন সব কিছু দেখেও না দেখার ভান ধরে আছে।এ বিষয়ে জানতে খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি বিধায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।দাউদকান্দি থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার হারুনুর রশীদ জানান, জায়গা সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে একটা সমস্যা চলছে। যেহেতু জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান, তাই আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করবে জায়গার মালিক কে হবে।