প্রতিবস্তায় তিনি ২ থেকে ৪ কেজি চাল কম দেন
শরীয়তপুর প্রতিনিধি: নিম্ন আয় ও গরিব মানুষের জন্য সরকার প্রতি কেজি চাল বিক্রি করে ১৫ টাকা ধরে। কিন্তু সরকারের এ কর্মসূচির সুবিধা পুরোপুরি পায় না গ্রহীতারা। ডিলারদের চাল আত্মসাৎ, খোলা বাজারে বিক্রি ও পরিমাপে কম দেওয়াসহ নানা রকম কারসাজিতে প্রতারিত হন ভোক্তারা।গত ৭ অক্টোবর শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানগর বাজারে মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করে। এতে ৩০ কেজির প্রতি বস্তায় ২ থেকে ৪ কেজি চাল কম পেয়েছেন ক্রেতারা।জানা যায়, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে শৌলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হারুন মোল্লার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৩৮৫ জনের মধ্যে চাল বিক্রি করছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে তিনি অনুমান ভিত্তিতে বালতি দিয়ে মেপে চাল বিক্রি করতেন। এতে ক্রেতারা ৩০ কেজি চালের স্থলে ২ থেকে ৩ কেজি চাল কম পেলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলতেন না। সরকার পতনের পরেও হারুন মোল্লা ক্রেতাদের চাল কম দিচ্ছেন। তবে তিনি এখন কৌশল পাল্টিয়েছেন। আগে বালতি দিয়ে মেপে চাল দিলেও এখন তিনি সরকারি সিল মোহরকৃত ৩০ কেজির বস্তায় চাল বিক্রি করেন। সরকারি সিলযুক্ত বস্তায় চাল কম হবে এমনটা কেউ পরিমাপের আগে চিন্তাও করেননি।কিন্তু গত ৭ অক্টোবর হারুন মোল্লার মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স কর্তৃক বিক্রি করা চালের প্রতিটি বস্তায় ২ থেকে ৪ কেজি চাল কম পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে হারুন মোল্লা খাদ্য গোডাউনের কর্মকর্তাদের ওপর দোষ চাপালেও পরে স্বীকার করেন যে, গুদাম থেকে চাল তিনি মেপে আনেননি।উজ্জল মুন্সী নামে এক ক্রেতা বলেন, হারুন মোল্লার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি থেকে কার্ডধারী হিসেবে আমি দীর্ঘদিন ধরে ১৫ টাকা দরে চাল ক্রয় করি। আগে তিনি বালতি দিয়ে মেপে চাল দিলেও এবার তিনি সরকারি সিলমোহরযুক্ত বস্তায় চাল দিয়েছেন। ভেবেছিলাম, আগের মতো এবার আর কম হবে না। কিন্তু পরিমাপের পর দেখতে পাই ৩০ কেজির বস্তায় ২৭ কেজি চাল দিয়েছেন তিনি। আমার চাচা আলাউদ্দিন মুন্সীও একজন কার্ডধারী। তিনি পেয়েছেন ২৬ কেজি। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের সাথে এভাবেই অন্যায় করা হয়।জুলহাস খলিফা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির একজন কার্ডধারী। তার স্ত্রী শিউলী বেগম বলেন, আমরা কার্ড পেয়েছি দুই বছরের বেশি সময় আগে। প্রত্যেকবারই ৩ থেকে ৪ কেজি চাল কম দেয় ডিলার। এবারও আমরা ২ কেজি চাল কম পেয়েছি।এবিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক হারুন মোল্লা প্রথমে বলেন, এখন তো আমি বস্তা খুলে বালতি দিয়ে চাল দিচ্ছি না যে, কমবেশি হবে। ৩০ কেজি ওজনের সরকারি সিলযুক্ত বস্তা খাদ্য গুদাম থেকে এনেছি। আমি প্রত্যেক কার্ডধারীকে একটি করে বস্তা দিচ্ছি। বস্তায় যদি চাল কম হয়ে থাকে, তবে সেই দায় খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের, আমার নয়। পরে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি চাল মেপে আনিনি গুদাম থেকে। আগামীতে মেপে আনব, যেন কম না হয়।বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল হক বলেন, প্রত্যেক ডিলারকে বলা হয়, নিজে উপস্থিত থেকে চাল গুদাম থেকে মেপে বুঝে নেবেন। তারা নিজেরা যদি মেপে না নিয়ে চাল কম পান, গ্রাহককে কম দেন, সেই দায় সম্পূর্ণ ডিলারের। যদি কোনো ডিলার ক্রেতাকে চাল কম দিয়ে থাকেন, তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।