আমার যদি একটা ঘর থাকতো
এসএম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: মরিয়ম (৪০) জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের দুরুঞ্জ নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুরের কন্যা। ১৩ বছর আগে বিয়ে হয় বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার নূর ইসলামের (৫০) সাথে। বিয়ের ১ বছর পর তাদের একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের ৭ মাস পর মরিয়মের জমানো টাকা ও ১ টি গরু নিয়ে পালিয়ে যায় স্বামী নূর ইসলাম। এরপর থেকে একাই জীবন যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন সংগ্রামী এ নারী।কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজার সংলগ্ন মিলন স্যানিটারীতে কথা হয় মরিয়মের সাথে। সংগ্রামী জীবনের কথা বলতে গিয়ে তার চোখ ভিজে যায়, গলা ধরে আসে। বলেন- ৩০ বছর আগে বাবা মারা যায়। ১০ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন। এক সময় তার দুঃখ-কষ্ট দেখে কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা মিলন স্যানিটারির মালিক তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ দেন। ২০ বছর ধরে সে কাজই করে আসছেন সততার সাথে । সেখানে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয় নূর ইসলামের সাথে, পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এক বছর পর তাদের সংসারে আসে এক কন্যা সন্তান। সন্তানের বয়স যখন ৭ মাস তখন স্বামী নূর ইসলাম তাকে না জানিয়ে টাকা ও গরু নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই তার সংগ্রামী জীবনের শুরু। বাধ্য হয়ে সাত মাসের ছোট সন্তানকে ঘাড়ে নিয়ে কাজ করেছেন। তার এমন দুঃসময়ে সাহস জুগিয়েছেন মিলন স্যানিটারি মালিক মিলন আকন্দ।মরিয়ম বলেন, বিয়ের ১২ বছর পর স্বামী তালাকের কাগজ পাঠাইছে। জায়গা-জমি কেনার সামর্থ নাই, সরকারিখাস জমিতে টিনের বেড়া দিয়ে কোনমতে মেয়েকে নিয়া থাকি। অসহায় হলেও কোথাও কোন সাহাজ্য পাই নাই। কাজ করতে পারলে ৪০০ টাকা দিনে আয় হয়। তাই দিয়েই কোনমতে সংসার চলে। অসুস্থ হলে তো কাজে যেতে পারি না, তখন না খেয়ে থাকতে হয়। মেয়েটা ক্লাস ফোরে পড়ে, ওরতো একটা পড়ালেখার খরচ আছে। ইচ্ছা থাকলেও মেয়ের পড়ালেখার খরচা দিতে পরিনা। আমি যদি কোনদিন অসুস্থ হই আমারে দেখার তো কেউ নাই। আমার থাকার জন্য যদি একটা বাড়ি দিত সরকার তাইলে অন্তত মেয়েটার একটা ভবিষ্যত হইতো। এক নিঃশ্বাসে কাথাগুলো বলছিলেন মরিয়ম আর কাদছিলেন হেচকি দিয়ে।মরিয়মকে কাজ দেয়া মিলন আকন্দ বলেন, মরিয়ম একটা বাড়িতে কাজ করাতো। সে বাড়ির মালিকের কিছু টাকা হারালে নির্যাতন করা হয় মরিয়মকে। তার এমন অসহায় অবস্থায় আমার এখানে মরিয়মকে কাজ দেই। এখন সে সব কাজই করতে পারে, তাকে পুরুসের সমান বেতন দেয়া হয়। সে অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করছে, একটা মেয়েকেও পড়াশুনা করাচ্ছে।পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম মন্ডল বলেন, মরিয়ম খুবই অসহায়, সে অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করছে । তাকে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন করলে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।মরিয়মের একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা তিথি বলেন, সে ঘর বরাদ্দের আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে এবং তার সন্তানের যাবতীয় পড়ালেখার খরচের ব্যবস্থা করা হবে।