• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:৪৩:৩৮ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:৪৩:৩৮ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

খুলনায় অতিবৃষ্টিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের

খুলনা ব্যুরো: গেল টানা ৩ দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতে ভেসে গেছে খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের ও পুকুর । এতে ফিন ফিস (সাদা মাছ), চিংড়ি ও পোনাসহ বিভিন্ন প্রকার মাছের ঘের থেকে মৎস্য খাতে ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বটিয়াঘাটা ও রুপসা উপজেলায় ক্ষতির তেমন কোনো তথ্য নেই জেলা মৎস্য অধিদপ্তরে।জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলার চাষীরা। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে চাষীদের। খুলনা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার হাজার হাজার বিঘার মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। এই বৃষ্টির কারণে উপজেলাগুলোর ৫০টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫শ’ ৪৯টি পুকুর ও খামার, ৮ হাজার ৪শ’ ৬৭টি ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ফিন ফিস (সাদা মাছ) ৫ হাজার ৮শ ৪৫ মে. টন, চিংড়ি ৭ হাজার ৩শ ৭৩ মে. টন, ২শ ৫ লক্ষ পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে খুলনার মৎস্য খাতের ক্ষতির পরিমাণ ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে পাইকগাছা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ৯৫০টি খামার ও পুকুর, ১ হাজার ৮শ ৫০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ভেসে গেছে ৮০ মে. টন ফিন ফিস (সাদা মাছ), ১০৫ মে. টন চিংড়ি মাছ। এ উপজেলায় মৎস্য খাতে আর্থিক ক্ষতি ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কয়রা উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৩শ ৬৪টি পুকুর ও খামার, ৯শ ৫৭টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ৩৫ মে. টন ফিন ফিস (সাদা মাছ), ৫২ মে. টন চিংড়ি মাছ। এখানে মৎস্য খাতে আর্থিক ক্ষতি ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। দিশেহারা হয়ে পরেছে স্থানীয় সকল মৎস্য চাষিরা, কি হবে আর কি করবে এখন !দাকোপ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১২০টি পুকুর ও খামার, ৮শ ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ২ হাজার মে. টন ফিন ফিস (সাদা মাছ), ২ হামার ৫শ মে. টন চিংড়ি মাছ। উপজেলায় মৎস্য খাতে আর্থিক ক্ষতি ৬ কোটি ৩০ লাখ  টাকা। ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ১০০টি খামার ও পুকুর, ৩ হাজার ৭শ ৫০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ৩ হাজার ৫শ ৬০ মে. টন ফিন ফিস (সাদা মাছ), ৪ হাজার ৬শ ৭০ মে. টন চিংড়ি মাছ। এতে মৎস্য খাতে ৬২ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।ফুলতলা উপজেলায় ৫শ ৫০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ৩৫ লাখ টাকার চিংড়ি মাছ। দিঘলিয়া উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ৫শ ৫০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ১শ ৬০ মে. টন ফিন ফিস (সাদা মাছ), ৪৫ মে. টন চিংড়ি মাছ। এতে মৎস্য খাতে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা আর্থিত ক্ষতি হয়েছে। তেরখাদা উপজেলার ৬ ইউনিয়নে ২৫টি খামার ও পুকুর, ৪০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ১০ মে. টন ফিন ফিস (সাদা মাছ), দেড় মে. টন চিংড়ি মাছ। এতে মৎস্য খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা আর্থিত ক্ষতি হয়েছে।মৎস্য চাষিরা বলছেন, টানা বর্ষার কারণে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে।  সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন।তেরখাদা উপজেলা সদরের মাঝিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বিল থেকে মাছ খালে উঠে এসেছে। যার কারণে জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ ব্যবহার করে বিভিন্ন আকৃতির মাছ ধরা পড়ছে। অতিবৃষ্টিতে মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় ঘের মালিকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এসব মাছ খাল, বিল ও নদীতে ছড়িয়ে পড়েছে।নগরীর আড়ংঘাটা থানার তেলিগাতী গ্রামের ডাকাতিয়া বিলের মাছ চাষি আকবর শেখ বলেন, ঘেরের অনেক সাদা মাছ, গলদা চিংড়ি, সব পানিতে ভাসায় নিয়ে গেছে। অনেক টাকা খরচ করেছি। এখন এই যে ক্ষতি, কীভাবে পোষাবো জানিনে? এখন আমাদের এই দুরাবস্থা! চিন্তায় ঘুমোতে পারিনি।খুলনা জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব পাল বলেন, জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের ১ হাজার ৫শ ৪৯টি পুকুর ও খামার, ৮ হাজার ৪শ ৬৭টি  ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে মৎস্য খাতে প্রায় ১শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষীরা একদম পথে বসে গেছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে তারা কতটুকু ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন সেই আশঙ্কা করছেন তিনি। প্রতিটি উপজেলার তথ্য ঢাকা মৎস্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের সরকারিভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।