• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সকাল ০৯:২২:০১ (24-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সকাল ০৯:২২:০১ (24-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

সফল হতে কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই: জারা টায়রা

কাজী জারা টায়রা, তিনি একাধারে একজন মডেল, অভিনেত্রী ও সফল নারী উদ্যোক্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি শুরু করেছিলেন ‘কিজোনা (Kizuna)’ নামের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। লেখাপড়া, অভিনয় ও ব্যবসা; তিনটিই সমানভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিজোনা’র সঙ্গে কাজ করছে তিন শতাধিক নারী। সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। তার সাথে আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?কাজী জারা টায়রা: ২০১৯ সালে জাপানে একটা শো করতে গিয়েছিলাম। সেখানে কাজের ফাঁকে বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরতে বের হয়েছিলাম। ওখানে দেখেছি, মানুষের লাইফস্টাইল অনেক উন্নত, অথচ সবাই পরিশ্রমী। তখন থেকেই আমার মাথায় চিন্তা আসল, আমি এমন কিছু করতে চাই, যার মাধ্যমে আমার নিজস্ব একটা আইডেন্টিটি তৈরি হবে। বিশেষ করে, আমি যেহেতু ফ্যাশন ডিজাইনের সাথে বা মিডিয়ার সাথে জড়িত, তাই আমি ওখান থেকে ফিরে এসে শাড়ি ও ফ্যাশন রিলেটেড প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করি। সে সময় করোনার লকডাউনের কারণে আমার জন্য বেশি সুবিধা হয়। তখন অনেকেই বসে বসে সময় পার করছিলো। কিন্তু আমি সময়টাকে খুবই প্রোডাকটিভ ওয়েতে পার করেছি। সেই সময়টা আমি অনেক গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ করে, ব্যবসা কীভাবে শুরু করবো, কোথা থেকে পণ্য সংগ্রহ করবো বা তৈরি করবো, কোথায় এবং কীভাবে সেল করবো; এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করেছিলাম। সেই চিন্তা থেকেই তখন আমি অনলাইলে কিজোনা নামে আমার বিজনেস প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করি।  কিজোনা একটি জাপানি শব্দ, যার অর্থ হলো বর্ন বাই লাভ বা ভালবাসার তৈরি। নাম এটা দেওয়ার কারণ হলো আমার সারা জীবনের যত ইনকাম ছিল, সকল টাকা দিয়ে আমি আমার বিজনেসটা শুরু করেছিলাম। একটা সময় মনে হলো, আমার আর কী কী বিষয় নিয়ে কাজ করা উচিত। আমি ট্রেডিশনাল জিনিসের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিলাম। তাই যশোরের মেয়ে হওয়াতে আমার এলাকার ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলি নিয়ে কাজ শুরু করি এবং কাজটা আমার জন্য সহজ হয়ে যায়। এক সময় আমি যশোর থেকে কাপড় বানিয়ে নিয়ে আসি, যেগুলি হ্যান্ড স্ট্রিচ বা হাতের কাজ করা। আর এই বিষয়গুলি আমার খুবই ভালো জানা ছিল। কারণ, করোনার সময় এটা নিয়ে আমি বিস্তর গবেষণা করেছি। অন্যদিকে আমি ছোট থেকেই জানতাম, আমার মা, খালা, নানু ও দাদিরা কোথা থেকে এবং কাদের কাছ থেকে এগুলি এনে ব্যবহার করেন।আলহামদুলিল্লাহ, এখন কিজোনায় ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ মেয়ে কাজ করে। এ ছাড়া আমি নিজেদের তৈরি কাপড়ের পাশাপাশি কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য জায়গা থেকেও বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আসি, যেগুলি আমি নিজে বানাতে পারি না। যেমন সুজ, ব্যাগ বা প্রয়োজনীয় জুয়েলারি ইত্যাদি। আর কিজোনার প্রোডাক্টগুলি একান্তই আমার নিজের ডিজাইন ও নিজেদের তৈরি করা।প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?কাজী জারা টায়রা: অনুপ্রেরণা বলতে জাপানের মানুষদের পরিশ্রম করা দেখে আমি বেশি উৎসাহিত হই। আর আমার বড় আপু আমাকে বেশ সাপোর্ট দিয়েছেন। এখন আমরা দু’জনে এক সাথেই বিজনেস করছি। আমার পরিবার আমাকে পুরোপুরি সাপোর্ট করেছে, তাদের সাপোর্টেই আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।কাজী জারা টায়রা: পথ চলাটা আমার আর্টিস্ট হিসেবেই শুরু। পরে ২০১৯ সাল থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করা বা পথ চলা শুরু করেছিলাম। আমি সবসময় চিন্তা করতাম, গ্রামের মেয়েরা পরিবারে অনেক কাজ করে। কিন্তু দিন শেষে এই পরিশ্রমের কোনো মূল্য নেই। আমার চিন্তা ছিল, বড় হয়ে তাদের জন্য কিছু করা। চিন্তা করলাম, হাতের কাজ করবো, যেগুলি সুন্দর ডিজাইন বা অনেক শৈল্পিক কাজ হবে। একটা মেয়ে অনেক কষ্ট করে, পরিশ্রম করে, অনেক চিন্তা করে একটা সুন্দর ডিজাইন তৈরি করে। সেটা নকশি কাঁথা হোক, পাঞ্জাবি হোক বা হোক শাড়ি। এর পিছনে একটা মেয়ের অনেক পরিশ্রম থাকে, অনেক কষ্টের পরে একজন আমাদের একটা পরিপূর্ণ জিনিস উপহার দেয়।  হয়তোবা আমি তাদের পরিশ্রমের পুরোপুরি পারিশ্রমিক দিতে পারি না। তবে, এটা আমার ভাবতে ভালো লাগে যে, আমি ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ মেয়ের জন্য কিছু করতে পেরেছি। তাদের একটা ইনকাম হচ্ছে, তাদের পরিবারকে সাপোর্ট দিচ্ছে, তাদের মুখে হাসি ফুটছে। এই বিষয়গুলি আমার ভালো লাগে বা আনন্দ দেয়। আর আমার আপু, আমার কাজিনস, আমার খালা, মামা তারা আমার পথ চলার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা আমাকে অনেক হেল্প করেছে, এখনও করছে। আর আমার পথ চলাটা কিছুটা সহজই ছিল, কারণ, আমাকে হেল্প করার অনেক মানুষ ছিল। মিডিয়ার আপুরা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, আমাকে অনেক হেল্প করেছে। বিশেষ করে, পরি আপু, মাহিয়া মাহি, শাওন আপুসহ সকলেই আমাকে অনেক হেল্প করেছে। এজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।প্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?কাজী জারা টায়রা: প্রতিবন্ধকতা তো কিছু থাকেই, প্রথম যখন বিজনেস শুরু করলাম তখন আসলে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া ছিল না। আসলে পরিকল্পনা করা আর বাস্তবায়ন করা আলাদা বিষয়। প্রথম যখন শুরু করেছি, তখন কভিডের সময় ছিল। ইচ্ছে থাকলেও আমি অনেক কিছু করতে পারতাম না, কিনতে বা আনতে পারতাম না। অনেক সময় দেখা যেতো, অর্ডার নিলাম কিন্তু সঠিক সময়ে দিতে না পারলে বিজনেস নিয়ে একটা বেড ইমপ্রেশন তৈরি হয়। আর কোভিডের সময় একটা ভয় কাজ করত যে, এ সময় এতগুলি টাকা ইনভেস্ট করব কিনা। পরে চিন্তা করলাম যে, বিজনেস যেহেতু অল অ্যাবাউট রিস্ক, তাই রিস্ক নিয়েই বিজনেস শুরু করলাম। কিজোনা শুরু করেছিলাম সেসময় আর আগে থেকেই মিষ্টির দোকান ‘সুগার হেভেন’ ছিল, যা বড় বোন জামাইকে সাথে নিয়ে করেছিলাম। ২টা একসাথেই শুরু করেছিলাম, যদিও যথেষ্ট সময় দিতে না পারায় পরে আর আমরা ওটা কনটিনিউ করতে পারিনি। ওটার ২টা শো রুম ছিল ঢাকাতে, পরে বিজনেসটা বন্ধ হয়ে যায়।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।কাজী জারা টায়রা: স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে, আমি বিজনেসটাকে অনেক বড় করতে চাই। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে আমাদের কাপড় বা প্রোডাক্টগুলি প্রেজেন্ট করব। এখন ইউকে বা ইউএসএ-তে অনেক জিনিসপত্র পাঠাই, ওখানে আমাদের অনেক ক্রেতা আছে। আমার চিন্তা হলো আমি ওখানে একটা শোরুম করতে চাই, বড় একটা ব্র্যান্ড বানাতে চাই। যাতে মানুষ বলে যে আমি অনেক ভালো কিছু করেছি বা মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি।  প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?কাজী জারা টায়রা: রাষ্ট্র আমার জন্য কী করল ওটা না, বরং রাষ্ট্রের জন্য আমি কী করতে পেরেছি, সেটাই মূল বিষয়। আসলে কঠোর পরিশ্রম অনেক গুরুত্বপূর্ণ, একজন মানুষ পরিশ্রম করলে একসময় সে সফল হবেই। আর রাষ্ট্রের ব্যাপারে কথা হলো, আমাদের যে ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি, এটার যে ঐতিহ্য আছে, ওটা যেন টিকে থাকে। এছাড়া আমাদের দেশে যেসব ছোট ছোট উদ্যোক্তা আছেন তাদের যেন ছোট ছোট লোন দেওয়া বা কোনো এনজিও’র অধীনে এনে কাজ করতে দেওয়া যায়, যাতে করে তারা টিকে থাকতে পারে। কিছুদিন আগে দেখলাম, বান্দরবানে কলা গাছ দিয়ে প্রথমবার শাড়ি বানিয়ে নাম দেয়া হয়েছে কলাবতী শাড়ি, সেটা প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেজেন্টও করা হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়গুলির প্রতি খুবই সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন, এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শকাজী জারা টায়রা: তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, কোনো কাজ আমরা শুরু করলাম বা করতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে না তাই ছেড়ে দিলাম; এমন যেন না হয়। প্রত্যেকটা মানুষকে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত। সে যেটা পছন্দ করে তার ওটাই করা উচিত। কেউ ফ্যাশন পছন্দ করলে সে যেন তাই করে, খাবারের ওপর কারও ইন্টারেস্ট থাকলে সে যেন তাই করে। তাই আপনি সময় দিন নিজেকে এবং চিন্তা করেন আপনি কোনটা করতে চান। তারপর সিদ্ধান্ত নিন। কাজ শুরু করুন এবং এর শেষ দেখেন।  বলতে হয় যে, আমি প্রথমে শুধু ২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছি। কিন্তু এখন প্রায় সাড়ে ৩শ’ লোক আমার এখানে কাজ করে। তাই নিজের পছন্দের ওপর ফোকাস করুন ও নিজেকে সময় দিন। সফলতা আসবে, ইনশা আল্লাহ।