• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১লা আশ্বিন ১৪৩১ রাত ০১:৩২:৪৪ (17-Sep-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১লা আশ্বিন ১৪৩১ রাত ০১:৩২:৪৪ (17-Sep-2024)
  • - ৩৩° সে:

ট্রমা কাটিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরতে জাবি ইংরেজি বিভাগের ব্যতিক্রমী আয়োজন

জাবি প্রতিনিধি: দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। গত এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ করলে ১১ আগস্ট পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।  এসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা শঙ্কা ও ট্রমায় ক্লাস-পরিক্ষায় ফিরে যেতে পারেনি শিক্ষার্থীরা৷ শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিক্ষায় ফেরাতে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইংরেজি বিভাগ ৷চারদিন ব্যাপী আয়োজনে প্রথম দিনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে উন্মুক্ত আলোচনা সভা এবং প্রশ্ন উত্তর-পর্ব শেষে মুক্তির গানে মেতে উঠে ইংরেজি বিভাগ। দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাবা, ক্যারাম, টেবিল টেনিস, লুডু, অনলাইন ফুটবলসহ বিভিন্ন ইনডোর গেমস অনুষ্ঠিত হয়। ইনডোর গেম শেষে বিকেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে একদিনের ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ইংরেজি বিভাগের করিডোরে বৈষম্যবিরোধী বিভিন্ন গ্রাফিতি এবং আলপনা অঙ্কন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় দিন  রাষ্ট্র, সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের প্রত্যয়ে "প্লান্টিং হোপস" ব্যানারে ফলদ বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা।ফলদ বৃক্ষরোপন শেষে দিনটি উদযাপনে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলে "কুক আপ" ব্যানারে আয়োজিত হয় চড়ুইভাতি। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় দুজন সাইকোলজিস্ট নিয়ে আয়োজন করা হয় একটি ওয়েবনিয়ার সেশন৷ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন সম্পর্কে ইংরেজি বিভাগের ৪৮ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফাহিম চৌধুরী জানান, "শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরতে সাহায্য করার জন্য ইংরেজি বিভাগের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। ইনডোর স্পোর্টস, দেয়ালচিত্র, ওয়েবিনার, চড়ুইভাতিসহ ছিলো সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন আয়োজন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে বিভাগীয় চেয়ারম্যান বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে এই সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবাই এখন ক্লাসে ফিরতে উদগ্রীব।"ইংরেজি বিভাগের ৪৯ তম আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী সৌরভ জহিরুল আয়োজন নিয়ে বলেন, "গত মাসের মাঝামাঝি দিকে যখন কোটা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয় তখন বিভাগের অনেকেই অংশ নিয়েছিল। ধীরে ধীরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পরে চারিদিকে, জল বহুদূর গড়ায়- আর প্রাণ যায় অগণিত মানুষের। বিভাগের অনেকেই আহত হয়েছে, কাজল ভাইয়ের মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায় দুটো গুলি। এতকিছুর পরপরই ক্লাসরুমে ফেরত আসাটা খুব একটা সহজ ব্যাপার ছিল না, এক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে আসে ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের শুরু থেকেই এই বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে আমাদের সাথে ছিল। এরকম একটা ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন অবশ্যই আশার জোগান দেয়, নতুন করে ভাবতে ও বাঁচতে শেখায়। বিগত কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ একটা নতুন পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে গেলেও থেমে গিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণ আর পরিবারগুলো। ইংরেজি বিভাগ এই ক্রান্তিকালীন মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিল এবং তারা ব্যতিক্রমের এই স্রোতে একটা প্রশংসা পেতেই পারে। বিভাগের এই আন্তরিক আয়োজন সবার জন্যে ইতিবাচক কিছুই বয়ে নিয়ে আসবে এবং মানসিক পীড়ন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে  করি। "৫০ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করে বলেন, "জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দেশের এতো বড় গণ-আন্দোলনে বিভাগের শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণের কারণে আমরা বেশিরভাগই মানসিকভাবে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই, সেকারণে ক্লাসে ফেরার পূর্বে ডিপার্টমেন্ট থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয় যাতে করে ক্লাস শুরুর পর আমরা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে পারি এবং ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারি। বিভাগ থেকে ইনডোর গেমস, পিকনিক,ট্রমা-ম্যানেজমেন্ট ওয়েবিনার আয়োজন করা হয় যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সবাই ই ক্লাসে ফেরার জন্য যে পর্যন্ত উৎসাহের দরকার তা ফিরে পেয়েছি বলে মনে করি। ডিপার্টমেন্টের চেয়ারনম্যানসহ সকল শিক্ষকদের অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের জন্য এতকিছুর আয়োজন করার জন্য।"ইংরেজি বিভাগের  ৫১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শেখ লোকমান গালিব অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন,"বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর থেকেই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থী অনলাইন অফলাইনে মিটিং করে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নেয়। তারপর ফুটবল, ই ফুটবল, টেবিল টেনিসের মতন খেলাধুলা, গান, আবৃত্তির মত সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে বিভাগ। এই শেষ নয়। সব বিভাগের চেয়ে ব্যতিক্রমী ধারায় শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা যাচাই এবং উন্নতির লক্ষ্যে ওয়েবিনার আয়োজন করে। আমরা আশা করছি ট্রমা কাটিয়ে আমরা দ্রুত ক্লাস রুমে ফিরে আসতে পারবো। "ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক রায়হান শরিফ জানিয়েছেন, "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে সরকার পতন হলো এবং তার পুরো সময় শিক্ষার্থীরা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো এবং তাদের এই সাইকোলজিক্যাল ক্রাইসিসের মধ্যে আমি নিজে ১৫ আগস্ট যেদিন ভিসির বাসায় ইংরেজি বিভাগসহ অনেকেই আটকে পড়ে হামলার স্বীকার হয়েছিলো ঠিক তখন থেকেই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।বিভিন্ন জায়গায় আটক হওয়া ইংরেজি বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থীকে সর্বাত্মক চেষ্টা মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও আন্দোলনে অংশ নিয়ে যেসব শিক্ষার্থী আহত ও গুরুতর আহত হয়েছেন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ইংরেজি বিভাগ এগিয়ে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রশাসন সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ক্লাস শুরুর বিজ্ঞপ্তি দিলে ১১ আগস্ট আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলন পরবর্তী ট্রমা কাটিয়ে ওঠা এবং শিক্ষা কার্যক্রমে মনোযোগী হতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে গ্রাফিতি ও আলপনা অঙ্কন,ইনডোর এ আউটডোর গেমস, ফলদ বৃক্ষরোপন কর্মসূচি,চড়ুইভাতি সহ বিভিন্ন আয়োজনের উদ্যোগ নেই। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে কথা বিবেচনা করে দুজন ফিজিউথেরাপিস্টের সহযোগিতায় ১৯ আগস্ট একটি ওয়েবনিয়ার আয়োজন করেছি। যা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে আসা এবং ক্লাসে মনোযোগী হওয়া এবং সার্বিক বিষয় বিবেচনা রেখে একটা মিটিংয়ের মাধ্যমে আমরা দ্রুত শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবার সিদ্ধান্ত নেব।"সহকারী অধ্যাপক তানিয়া তাসনিম হোসেন বলেন, "গত ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক নোটিশ অনুযায়ী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম ফেরার কথা থাকলেও সম্ভবপর শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো যেখানে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলনে ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৭ জন শিক্ষার্থী আহত এবং একজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। আন্দোলনের পরে পরিস্থিতি সম্মুখীন হওয়া  শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ফিরিয়ে নিয়ে চেষ্টাই আমরা করছি। বিগত কদিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশ্ন উত্তর ও আলোচনা সভা, আলপনা, গ্রাফিতি অঙ্কন এবং "প্লান্টিং হোপ" ট্যাগ লাইন রেখে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনায় একটি ওয়েব মিনার আয়োজন করা হয়েছে,  যেন শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণে তারা তাদের পুরোনো দিন গুলো ফিরে পায়, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারে এবং নিজেরা স্বাভাবিক অনুভব করতে পারে।"