মুদ্রাক্ষরিকের পেশা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে বিয়েও করেননি মজিবর রহমান
উত্তর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: যখন ছিলো না কম্পিউটার, প্রিন্টার মেশিন, খট খট শব্দে টাইপিং করা মুদ্রাক্ষরের জনপ্রিয়তা ছিল তখন তুঙ্গে।বিভিন্ন আবেদন, সরকারি অফিসের নথিপত্র, স্কুল-কলেজের প্রশ্নপত্র, চিঠি লেখার কাজে ব্যবহৃত হতো মুদ্রাক্ষর মেশিন। কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে, গুরুত্বহীন হয়ে যায় মুদ্রাক্ষর শিল্প।শত প্রতিকূলতার মাঝেও মুদ্রাক্ষরিক পেশা টিকিয়ে রেখেছেন মো. মজিবর রহমান (৫০)। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের মাহমুদপুর বাজারের গ্রামীণ ব্যাংকের গেইটে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৮-১০ পর্যন্ত ২ ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে বসে টাইপিং করেন তিনি।জমি বন্ধক রাখার স্ট্যাম্প কিনে, নাম ঠিকানার ঘর ফাঁকা রেখে টাইপিং করে সাইকেলে চড়ে গোপালপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মুদি দোকানে বিক্রি করেন তিনি। এতে তার দৈনিক আয় হয় ৮০-১০০ টাকা।সরেজমিনে জানা যায়, মুশুর্দী ইউনিয়নের বাগুয়া গ্রামের মৃত আব্দুস ছামাদের মেঝ ছেলে মজিবর রহমান। তিনি ১৯৮৬ সালে ধনবাড়ী মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইসএসসি) পাশ করেন। এরপর ঢাকাতে টিউশনি শুরু করেন। একপর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে কলা বিক্রি করেছেন। সেখানেই একজনের উৎসাহে ১৯৯৪ সালে মুদ্রাক্ষরিক কাজ শিখেন। এরপর ১৯৯৭ সালে নিজের মেশিন নিয়ে বসেন আদমজীতে। আদমজীর সেই গৌরব হারানোর পর বাড়ি ফিরেন তিনি।এসব কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কারণে স্থানীয়রা তাকে পাগল বলে সম্বোধন করে, তাই বিয়ের পিঁড়িতেও বসতে পারেনি বলে জানান তিনি।মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘বর্তমান মেশিনটি ২০১৯ সালে ১৫ হাজার টাকায় ঢাকা থেকে এনেছি। প্রতিদিন যা আয় করি, তা দিয়ে চা খরচ চলে যায়। সংসার না থাকায় তেমন চিন্তা করতে হয় না। ব্যাপক চাহিদার পেশাটির গৌরব হারানোয় আফসোস করেন তিনি। এখন এটার যন্ত্রপাতি পেতেও বেগ পেতে হয় এবং উচ্চ মূল্যে কিনে আনতে হয়।’জনতা পেপার হাউজের মালিক আ. সালাম খান বলেন, ‘৯০-এর দশকে মুদ্রাক্ষরের ব্যাপক চাহিদা ছিল। খাদ্য গুদামের সামনে হক সাহেবের দোকানে ৫টি মেশিন ছিল। ওখানে সবসময় ভিড় লেগেই থাকতো। কম্পিউটার প্রচলনের পর এসব গোপালপুর থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এখলাস মিয়া বলেন, ‘এমন মানুষদের সহযোগিতার জন্য এখন এরকম কোনো কিছু নাই। তবে ভবিষ্যতে এরকম কিছু এলে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা করা হবে।’