খুলনা জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের ডাকা ধর্মঘট স্থগিত
বাবুল আকতার, খুলনা: খুলনার ৩ ডিপোর তেল উত্তোলন পরিবহন ৯ ঘণ্টা বন্ধ রাখার পর অবশেষে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস্ এজেন্টস্ এন্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ১ অক্টোবর রোববার রাত সাড়ে ৭টায় এই ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। খুলনা বিভাগীয় জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে দাবি বাস্তবায়ন না হলে চলতি মাসের শেষের দিকে আবারও ধর্মঘটের ডাক দিয়ে আন্দোলনে মাঠে নামবেন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা।এর আগে বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস্ এজেন্টস্ এন্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন খুলনা বিভাগীয় কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। খালিশপুরস্থ বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স এসোসিয়েশনের ভবনে গত ৯ জুলাই সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলনে ৩ দফা দাবি উত্থাপন করেন ব্যবসায়ীরা।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব শেখ ফরহাদ হোসেন।সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ৩১ জুলাই ২০২৩ এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে ১ আগস্ট ২০২৩ থেকে অনির্দিষ্টকাল জন্য জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহনে বিরত থাকবে। পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দাবি বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেন নেতৃবৃন্দ। কিন্তু জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের ওই ৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৩ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে খুলনার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপোর তেল উত্তলন ও পরিবহন বন্ধ করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেন বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। পরর্বতীতে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করেন ব্যবসায়ীরা।সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেও তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় পুনরায় অনিদির্ষ্টকালের জন্য ধর্মঘট কর্মসূচির ডাক দেন খুলনাসহ ১৫ জেলার জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। ধর্মঘট কর্মসূচি অনুযায়ী ১ অক্টোবর রোববার সকাল ৮টা থেকে খুলনার কাশিপুরস্থ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপোর তেল উত্তলন ও পরিবহন বন্ধ করে দেন নেতৃবৃন্দ। ফলে খুলনার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও ১৫ জেলায় জ্বালানি তেল পরিবহন বন্ধ থাকে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টা জ্বালানি তেল উত্তলন বন্ধ থাকায় বিকালে বাংলাদেশ পেট্রোলীয়াম কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে তেল ব্যবসায়ীদের ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্মঘট স্থগিতের জন্য অনুরোধ করে বিপিসি। এতে তারা ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।খুলনা বিভাগীয় জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন জানান, ডিজেলের ২ ভাগ, পেট্রোলের ৩ ভাগ এবং অকটেনের ৪ ভাগ কমিশন বাড়িয়ে সাড়ে ৭ ভাগ করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের শিল্প থেকে বাদ দিয়ে কমিশন এজেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া পুরাতন ট্যাংক লরি অবসরের সময় ২৫ বছর থেকে বাড়াতে হবে। এসব দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছি। দাবির প্রেক্ষিতে কমিশন বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, এটি একটি ফরমুলা গেজেট। সেই গেজেট ভুলে ভরা। শুধু গেজেট প্রকাশ নয়, দাবির বাস্তবায়ন করতে হবে। তারা আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যে কারণে আমরা অনির্দিষ্ট কালের এই ধর্মঘট কর্মসূচি আপাতত স্থাগিত করেছি। দাবি বাস্তবায়ন না হলে চলতি মাসের শেষের দিকে আবারও অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট কর্মসূচি চলবে বলেও জানান শেখ মুরাদ হোসেন। উল্লেখ্য ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় কমিশন বাড়িয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই অনুযায়ী প্রতি ১০০ টাকার অকটেন বিক্রিতে পাম্প মালিকরা চার টাকা ২৮ পয়াসা, পেট্রোল বিক্রিতে ৪ টাকা ৩৪ পয়সা, কেরোসিনে ২ টাকা এবং ডিজেলে ২ টাকা ৮৫ পয়সা কমিশন পাবেন। এর আগে ডিজেলের ২ শতাংশ, পেট্রোলের ৩ শতাংশ এবং অকটেনের ৪ শতাংশ কমিশন ছিল।