• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৫:২৭:০৪ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৫:২৭:০৪ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে: নাসিমা আক্তার নিশা

নাসিমা আক্তার নিশা, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষক ও ইনফ্লুয়েনশিয়াল স্পিকার। তিনি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর জয়েন সেক্রেটারি, নারী উদ্যোক্তাদের প্লাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্য এবং স্টার্ট-আপ রিভেরি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যেই তিনি ডব্লিউআইসিসিআই অ্যাওয়ার্ড-২০২১, অনন্যা টপ টেন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯, স্বাধীনতা সংসদ অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল বিজনেস সিএসআর অ্যাওয়ার্ড-২০২১, স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ ও ডব্লিউএসআইএস অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ লাভ করেছেন। সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?নাসিমা আক্তার নিশা: আমি রিভেরি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম ২০১০-১১ সালে। তখন নিজে উদ্যোগ নিতে গিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। সেই বাঁধাগুলো থেকেই বুঝতে পেরেছি, কোথায় কোথায় আমার কাজ করা উচিত। মোটামুটি ভালো ধরনের একটি ইনভেস্ট নিয়ে এসেও যদি বাধার সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে অন্যরা কীভাবে সামনে আসবে, এসব চিন্তা থেকেই আমি কাজ শুরু করি। আমরা নারীরা সবই পারি। সেই ভাবনা থেকেই ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর নারী উদ্যোক্তাদের প্লাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) জন্ম।প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?নাসিমা আক্তার নিশা: বাবা হাজী সাহাব উদ্দিনের কাছ থেকেই জীবন চলার পথের মন্ত্রণা পেয়েছি। আমার বাবা সবসময়ই মানুষের ভালো করতে চাইতেন এবং সবাইকে নিয়েই কাজ করতে পছন্দ করতেন। আমার সকল কাজে আমার পরিবারই আমাকে সবসময় প্রেরণা জুগিয়েছে।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।নাসিমা আক্তার নিশা: আমার পড়াশোনা আইটিতে ছিল না। তাই আমি যখন আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে আসি, তখন সমস্যা মোকাবেলা করে করেই শিখেছি। আমার তখন মনে হয়েছে, উই থেকে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি। যেখান থেকে উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের স্কিল বৃদ্ধি করতে পারবে। উই’র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা তাদের জানার পরিধিটাকে ভালোভাবে রিভাইজ করতে পারবে। এরই ধারাবাহিকতায় উই থেকে আমরা অফলাইন-অনলাইনে ট্রেনিং ও ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করেছি। আইসিটি মিনিস্ট্রির সহায়তায় কোর্সেরা ও মাস্টারক্লাস নামে ইন্টারন্যাশনাল মানের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছি।এছাড়াও গ্রুপের সদস্যদের শেখার আগ্রহ থেকে এখানে ফ্রিতে প্রশিক্ষণের সুযোগও রয়েছে। পাশাপাশি বেকিং, কুকিং, ফটোগ্রাফি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়েও আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ২০১৭ সাল থেকে প্রতি মাসেই উই থেকে কোনো না কোনো ট্রেনিংয়ের আয়োজন ছিল। তাছাড়া উদ্যোক্তাদের জন্য নানা ধরনের সেমিনার বা মেলার আয়োজন করেছি।কোভিডের সময় সবার মনে একটা ভয় কাজ করছিল। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে, কখন নিজের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়। কখন কে মারা যায় কিছুই বলা যাচ্ছিল না। তখন সবার মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক চিন্তা কাজ করছিল। এগুলো নিয়ে গ্রুপে অনেক লেখালেখি হতো। যখন গ্রুপে এসব আলোচনা দেখে ভাবলাম, এভাবে চললে মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগেই হতাশ হয়ে মারা যাবে। এর পর আমরা রুলস করে দিলাম কেউ গ্রুপে নেগেটিভ কিছু লিখতে পারবে না। সব পজেটিভ লিখতে হবে। এর পর থেকে কিছুটা পরিবর্তন আসা শুরু করেছে। এর মাধ্যমে বুঝতে পারলাম মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে। হতাশা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছে।ওই সময়টাতে আমরা ইক্যাব থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারকে খাবার পাঠানোর কাজ শুরু করেছিলাম। একটা সময় মনে হলো এদের এভাবে খাবার পাঠিয়ে লাভ নেই। এতে করে এ লোকগুলোর অভ্যাস খারাপ হবে এবং একটা সময় গিয়ে আমাদেরও ফান্ড শেষ হয়ে যাবে। ঠিক তখন মাথায় এলো এদের কোনো কাজে নিয়ে আসা যায় কিনা? বললাম, যারা খাবার ভালো বানাতে পারেন তারা খাবার তৈরি করেন, প্রয়োজনে আমি খাবার অর্ডার করবো। অথবা আমাদের যার যেটা প্রয়োজন আমাদের নিজের মধ্যে বানিয়ে বিক্রি করবো।ধীরে ধীরে বিষয়টিকে একটা পলিসির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করলাম। একজন উদ্যোক্তা ভালো রুটি বানাতে পারেন, তাকে বললাম,আমি রুটি বানাতে পারি না। আমি আপনার কাছ থেকে রুটি অর্ডার করবো। কেউ দেখা গেছে আচার বানাতে পারে। এজন্য আমরা বললাম, আমাদের নিজেদের তৈরি করা খাবার একে অন্যজনেরটা কিনবো। এর পর আমরা খাবারের রিভিউ দেওয়া শুরু করলাম। ঠিক এই সময়টাতে একটা বড় পরিবর্তন আসা শুরু করলো। কারণ কোভিডের আগে মানুষ বাইরে গিয়ে খেতে পছন্দ করতো। কোভিডের কারণে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। তখন দেখা গেছে বাইরে গিয়ে খেতে না পারলেও বাইরে থেকে খাবার এনে ঘরে তো খাওয়া যায়। এর মাধ্যমে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়ে গেছে।এর মধ্যেই এলো রোজা। তখন আমরা সবাইকে বললাম,ইফতার এবং সাহরি নিয়ে কাজ করতে। কেউ বুটিকস নিয়ে কাজ করছে,আবার টেইলার্স সার্ভিসটাও এর সাথে যুক্ত করা শুরু হলো। এর মাধ্যমে মানুষের চাহিদা মেটাতে বেশ কিছু নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলো। এসব প্রসেস যখন খুব ভালো সাড়া পেল তখন থেকে উই’র সাথে মানুষের সম্পৃক্ততা বেড়ে গেল। তারি ধারাবাহিকতায় উই আজ এত বড় প্লাটফর্ম হতে পেরেছে।প্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?নাসিমা আক্তার নিশা: আমি যখন বাবার ব্যবসা থেকে বের হয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করি, তখন কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হই। সেই বাধাগুলো উত্তরণের জন্যই নারীদের জন্য এমন প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তার উদ্ভাবন ঘটেছিল। যেখানে নারীরা বাধা ছাড়া কাজ করতে পারবে। আসলে যেকোনো কাজেই বাধা থাকবে। কিন্তু যে ধরনের বাধা তাদের পাওয়া উচিত না, সেটাও নারীরা পায়।২০১৭ সালে উইকে নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল আমার। উই শুরুর পর অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আমার যথেষ্ট ধৈর্য শক্তি ছিল। ধৈর্য ধরে টিকে ছিলাম বলে আজকে উই এখানে আসতে পেরেছে। যারা নতুন যুক্ত হচ্ছেন তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অনেকের নির্দিষ্ট কোনো বিজনেস প্ল্যান নেই। এমনকি ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যান সম্পর্কেও তাদের তেমন জ্ঞান নেই। এক্ষেত্রে স্কিল ডেভেলপম্যান্টটাই সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট।দ্বিতীয় সমস্যা হলো তাদের ফান্ডিংয়ের সংকট থাকে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হলে অবশ্য খুব বেশি ফান্ডের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুও তাদের কাছে থাকে না। যেমন একটা মোবাইল দরকার বিজনেস অপারেট করার জন্যে, ল্যাপটপ তো অবশ্যই লাগবে। তবে ল্যাপটপ ছাড়া মোবাইল দিয়েও কাজ চলে। অথচ মোবাইলটা কেনার মতোও পর্যাপ্ত টাকা তাদের কাছে থাকে না।আবার মেটিরিয়ালগুলো যে বিক্রি করবে, তার জন্যেও ফান্ডিং প্রয়োজন হয়। এই ফান্ডিংটাই মূলত আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।নাসিমা আক্তার নিশা: আগামী ১০ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উই’র ব্রাঞ্চ থাকবে। সবাই জানবে মেইড ইন উই, মেইড ইন বাংলাদেশ নামে একটা ব্রান্ড আছে। যেখানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পণ্য পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, খাঁটি বাংলাদেশি পণ্য পাওয়া যাবে। কোন রকম বিদেশি কাঁচামালের সংস্পর্শ ছাড়াই। আমরা এখন শুধু শহর না, গ্রামে গ্রামে এবং প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে কাজ করছি। যাতে গ্রামেও উদ্যোক্তা তৈরি হয়, সেই চেস্টা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। ক্রস বর্ডারের পলিসিটা আমাদের প্রণয়ন করতে হবে। আমরা রফতানি মার্কেটের স্বপ্ন দেখছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভিশন হচ্ছে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ফাইভ নাগাদ ফাইভ বিলিয়নের একটা এক্সপোর্ট মার্কেট রেডি করা। একজন উদ্যোক্তাকে কোনো প্রডাক্ট ক্রস-বর্ডারে পাঠাতে হলে তার ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে পনেরোটার মতো লাইসেন্স এবং অনুমতি লাগে। এসব ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?নাসিমা আক্তার নিশা: উই’র সদস্যদের বা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের যে কোর্সগুলো সাজানো আছে, তার মধ্যে একটা হলো বেসিক কোর্স। যেটা আমরা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সাজিয়েছি। যারা নতুন এবং শিখতে চায় তাদেরকে ১২টি মোডিউলে সাজানো কোর্সটি করানো হয়। এই কোর্সটা করলে অনন্ত সে জানতে পারবে, কীভাবে মার্কেটিং করতে হয়, কীভাবে ফাইনান্স অংশ সামলাতে হয়। এর মাধ্যমে নতুনরা যেমন উৎসাহ পায়, তেমনি তাদের কাজ শিখে বাস্তবে প্রয়োগের সুযোগও থাকে। এভাবে আমরা নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষিত এবং উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করে থাকি।এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অনেকগুলো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তবে নতুনদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স করা সহজকরণ, সহজ শর্তে ঋণ, আরও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে চাকরির প্রতি নির্ভরতা কমে যাবে।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ।নাসিমা আক্তার নিশা: সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সাফল্য অর্জনের জন্য উই এক সম্ভাবনার দ্বার হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে অনলাইনে দেশি পণ্যের প্রতি আস্থা ও বিক্রি অনেক বেড়েছে; যা আগামীতে আরও বাড়বে। মাঝে মাঝে আমাদের যে স্বপ্ন আছে, সেটা ভুলে যাই। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই মিলবে অর্থনৈতিক মুক্তি। আর পরিবারের একজন যখন সংসারের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে; তখন পরিবারের সবাই ভালভাবে দিন কাটাতে পারবে।সকলকেই আমি একটি কথা বলি, ধৈর্য ধরে লেগে থাকবেন। এর বিকল্প আর কিছুই নেই। আপনাদের একটিভ থাকতে হবে। নতুন যারা আসছেন তাদের বলব, অবশ্যই নিজের পছন্দের জায়গা নিয়ে কাজ করবেন। অন্যের উদ্যোগ ভালো হচ্ছে; সেই টাইপের উদ্যোগ নিয়ে আসবেন, এরকম চিন্তাভাবনা করবেন না। চিন্তা করবেন, এই উদ্যোগের প্রতি আপনার প্যাশন আছে কিনা। অবশ্যই সৎ পথে থাকবেন। তা না হলে উদ্যোগও সৎ থাকবে না। সুতরাং সৎ থেকে কাজ করলে সফলতা আসবে, ইনশা আল্লাহ।