• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৪:০০:৩৪ (23-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৪:০০:৩৪ (23-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

সিংগাইরে বাড়ছে পেঁপের আবাদ, এবার ১৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দিন দিন বাড়ছে পেঁপের আবাদ। অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে ৬শ’ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনকৃত এই পেঁপের বাজারমূল্য প্রায় দেড়শো কোটি টাকা। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এসব পেঁপে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চর আজিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বাবুল। মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরোনো বাবুল ছোট বেলা থেকেই বাবার কাছে শিখেছেন কৃষি কাজ। সেই থেকে আর অন্য কোনো পেশায় যেতে হয়নি তাকে। কৃষি কাজ করেই নিজের ভাগ্য বদলেছেন তিনি। এক বিঘা দিয়ে কৃষি কাজ শুরু করলেও এখন তিনি ১৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজি ফলান। শুধু তাই নয়, তার আশপাশের মানুষজনকে উৎসাহ দিয়ে পেঁপেসহ নানা সবজি ফলাতে সহযোগিতা করছেন বাবুল।সফল কৃষি উদ্যোক্তা বাবুল বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে কৃষি কাজ করেছি। আমাদের এলাকার মাটি ও আবহাওয়া গাজর চাষের জন্য খুব উপযোগী। এই এলাকা গাজর চাষের জন্য বিখ্যাত। গাজরের আবাদ দিয়েই আমার কৃষি কাজের হাতে খড়ি। তারপর মিষ্টি কুমড়া, দেশি লাউ, ধনিয়া, পেঁপেসহ নানা সবজি আবাদ করেছি। মূলত গাজর চাষ করেই সবচেয়ে বেশি টাকা আয় করে থাকি। এর সাথে সাথি ফসল হিসেবে পেঁপে, ধনিয়া করে থাকি। গাজরের ফলন শেষ হয়ে এলে কিছু দিন পর পেঁপের ফলন আসতে শুরু করে। তাতে করে সাড়া বছরই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, এবার ৬ বিঘা জমিতে পেঁপের আবাদ করেছি। সব মিলে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করে চাষ করা পেঁপে এরই মধ্যে বিক্রি করেছি ১৮ লাখ টাকার। আরও ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করা যাবে। এই কৃষি কাজ করেই আমার পরিবারের স্বচ্ছলতা এসেছে। আমার তিন ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি আমাকে কৃষির কাজে সাহায্য করে।চর আজিমপুর গ্রামের পেঁপে চাষি শামসুল হকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গাজরের পাশাপাশি আমাদের এই অঞ্চলে এখন পেঁপে চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় পেঁপের এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় সব মিলে আবাদের খরচ ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। আর বিঘায় তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ গাছ লাগানো যায়। মৌসুমের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিকেজি পেঁপে পাইকারি বিক্রি হয় গড়ে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। আর পাইকাররা খেত থেকে কিনে নিয়ে যায় বলে আমাদের তেমন কষ্ট করতে হয় না।একই গ্রামের মোজ্জাম্মেল খান পেঁপে চাষ শুরু করেছেন তিন বছর আগে। তিনি জানান, গাজরের মৌসুমে আমি গাজর চাষ করতাম। বাকি সময় আমার দেড় বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। বয়স হয়েছে তাই চাষাবাদ করার তেমন ইচ্ছাও হয় না। কিন্তু আমার ক্ষেতের পাশেই ভাতিজা বাবুলের ক্ষেত। তার খেতের সুন্দর পেঁপে দেখে আমি তার কাছে পরামর্শ চাইলে সে আমাকে সব ব্যবস্থা করে দেয়। এবার এক লাখ সাত হাজার টাকা খরচ করেছি। এই পর্যন্ত তিন লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। আরও এক লাখ টাকার মতো বিক্রি করা যাবে। আর কিছু পেঁপে পাকিয়ে বিক্রি করার ইচ্ছা আছে।জানা যায়, জমি অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ার কারণে সিংগাইরের পেঁপের আকার ও মান ভালো। কম খরচে চারা রোপণের ৪ থেকে ৫ মাসেই ফলন পাওয়া যায়। তাই উপজেলায় পেঁপের আবাদ করছেন প্রায় আড়াই হাজার কৃষক। ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাইকাররা ক্ষেত থেকেই পেঁপে কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যা চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ আশুলিয়া, বাইপাল, সাভার, গাজীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।উপজেলার ভাকুম এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী বরকত হোসেন জানান, আমাদের সিংগাইরে প্রচুর পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। একেক মৌসুমে আমরা একেক সবজি কিনে তা দেশের বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করে থাকি। বর্তমানে আমি প্রতিদিন আমাদের এলাকার পেঁপে কিনে তা ঢাকাসহ গাজীপুর, নোয়াখালী, ফেনীতে বিক্রি করছি। সিংগাইরের পেঁপের স্বাদ ও আকার ভালো হওয়ায় এর চাহিদা আড়তগুলোতে বেশি।জয়মন্টপ এলাকার পাইকার নূর উদ্দিন জানান, আমাদের সিংগাইর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ ব্যাপারি আছি। প্রতিদিন আমি ২৫ থেকে ৩০ মণ করে পেঁপে কিনে তা আশুলিয়া, বাইপাল, সাভার ও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি।মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ জানান, সিংগাইর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৬শ’ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। সিংগাইরে মূলত অধিকাংশ পেঁপে চাষি গাজরের সাথি ফসল হিসেবে পেঁপে চাষ করে থাকেন। গাজরের ফলন শেষ হওয়ার কয়েক মাস পর পেঁপের ফলন আশা শুরু করে। একটি পেঁপে গাছ তিন বছর পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। তাছাড়াও স্বল্প সময়ের জন্য সাথি ফসল হিসেবে ধনিয়াও করেন অনেক কৃষক। এতে করে কৃষকরা আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছে। বিভিন্ন জাতের সবজির পাশাপাশি পেঁপে চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাদের সহায়তায় নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এই মৌসুমে সিংগাইর উপজেলায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছে কৃষি বিভাগ।