রাষ্ট্রের সংস্কারে ১০ খাতে জামায়াতের ৪১ প্রস্তাবনা
নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্র এবং শিক্ষাসহ রাষ্ট্রের ১০টি খাতে সংস্কারের জন্য ৪১টি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।৯ অক্টোবর বুধবার দুপুর ১২টায় গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ উপস্থাপন করেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।এ সময় দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।রাষ্ট্র সংস্কারে সেক্টর অনুযায়ী আলাদা আলাদা ১০টি প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- একজন ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে না পারবেন না, ইভিএম বাতিল, পুলিশি আইন সংস্কার, সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের সময়সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ।জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, এই ১০ খাতের প্রস্তাব শুধুমাত্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য। নির্বাচিত কোনো সরকারের জন্য নয়। এই সরকারের কাছে আসলে আমাদের মোট ৪১টি প্রস্তাব। তার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব আজ গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।বক্তব্যের শুরুতেই ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই-আগস্টে যারা জীবন দিয়েছে আল্লাহ তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আওয়ামী লীগ দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য প্রশাসন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ কুক্ষীগত করেছিল। হাজার হাজার মামলা দায়ের করে জুলুমের রাজনীতি কায়েম করেছিল।তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশনের অনেক সংস্কার প্রয়োজন। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করতে হবে। একইসঙ্গে সংসদে বিরোধীদলের ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।এর মধ্যে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা কারার প্রস্তাব দিয়ে ডা. তাহের বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আইন সংস্কার করতে হবে। দেওয়ানি মামলা ৫ বছর ও ফৌজদারি মামলা ৩ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল, কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছিল। এখন এটি অন্তর্ভুক্ত করতে এবং ইভিএম বাতিল করতে হবে।পুলিশের আইন পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, বদলি ও পদোন্নতির জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। কোনো সুপারিশের সুযোগ রাখা যাবে না। পুলিশে নিয়োগে দলীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পুলিশ ট্রেনিংয়ের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা রাখতে হবে। পুলিশের কাছে মারণাস্ত্র দেওয়া যাবে না।তিনি আরও বলেন, র্যাবে যারা গত ১৫ বছর কাজ করেছেন তাদের ফিরিয়ে আনা যাবে না ও র্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে সংস্কার করতে হবে।সরকারি চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি নিয়েও প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির বলেন, সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনামূল্যে করতে হবে। চাকরিতে বয়স সময়সীমা আগামী ২ বছরের জন্য ৩৫ ও পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর আর শেষ হবে ৬২ বছর বয়সে।এ সময় সরকারি চাকরিতে প্রশ্নফাঁস বা দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে দুদককে শক্তিশালী করে স্বাধীনভাবে কাজ করার ব্যবস্থা করতেও প্রস্তাব দেওয়া হয়।পরপর দুই বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এমন প্রস্তাবনা দিয়ে দলের পক্ষ থেকে নায়েবে আমির বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ব্যবহারে ভাগভাগি থাকতে হবে।প্রস্তাবনায় শিক্ষা ও দেশের বিনোদন সেক্টর নিয়েও সংস্কারের দাবি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সকল শ্রেণির পাঠক্রমে হজরত মুহাম্মাদ (স.)-এর বিষয় যুক্ত করতে হবে। নাটক, সিনেমা ও কন্টেন্ট অশ্লীলমুক্ত করতে হবে।ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, চীন, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদী বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে। পররাষ্ট্র বিষয়ে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক রাখতে হবে। হজ ও ওমরার খরচ কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গণহত্যায় জড়িত যারা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।আগে নির্বাচন, নাকি সংস্কার, এমন এক প্রশ্নে জামায়াত আমির জবাব দেন, দুটি রোডম্যাপ হবে। একটা সংস্কারের, আর একটা নির্বাচনের। তবে সময় যেন অতি দীর্ঘ না হয়, আবার অতি সংক্ষিপ্ত না হয়।