বগুড়া আইএইচটির শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি নিয়ে এখনও রাজপথে
বগুড়া প্রতিনিধি: প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বগুড়ার ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থীরা পাঠ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ কর্মসূচি করছেন। শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে চলমান এই বিক্ষোভ নিরসনে শিক্ষকরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এমনকি শিক্ষার্থীদের ফেরাতে নেননি কোনো উদ্যোগও। এ ছাড়া আইএইচটিতে বহিরাগত হিসেবে প্রবেশ ও শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত সজল কুমার ঘোষকেও পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছেই। ১০ সেপ্টেম্বর রোববার দিনব্যাপী আইএইচটির ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। এ সময় কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থও হয়ে পড়েন।এর আগে গত ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির হোস্টেলের মিল ম্যানেজার ও শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলামকে মারধর করেন সজল ঘোষ। এই মারধরকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রাখার পর তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। তখন থেকেই তারা কলেজের ভিতরে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। পরের দিন তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো বহিরাগত সন্ত্রাসীকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়দানকারী অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনের অপসারণ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ইভটিজিংকারী সজল ঘোষের গ্রেফতার ও শাস্তি এবং সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।গত ২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করা হয়। তবে এর আগে থেকেই সজল পলাতক রয়েছেন।সজল নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ তিত পাড়ার মৃত সুমেন কুমার ঘোষের ছেলে। সজল ২০০৫ সালে ডিমলা রানী বৃন্দারানী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বগুড়ার বেসরকারি একটি মেডিকেল টেকনোলজি ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেন তিনি। বগুড়ায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি।এর মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের দাপ্তরিক কর্মসূচি ছিল বগুড়ায়। তার আসার খবর পেয়ে ব্যানার হাতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটোকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশের আইজিপি যে মুহূর্তে বগুড়া-শেরপুর রোডে যাচ্ছিলেন সে সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থান করে ব্যানার হাতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ব্যানারের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম বলেন, আমরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিজিল সার্জন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। ১৩ দিন পর আমরা ক্যাম্পাসে একটা ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ, ডিবির সদস্যরা সেটি ঘিরে ধরে আইজিপিকে দেখতে দেয়নি।তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসন সোচ্চার না হলে আমরা আবারও রাজপথে নামবো। রাজপথ দখল করবো। যতক্ষণ আমাদের দাবি পূরণ না হবে ততক্ষণ আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।শাহরিয়ার হাসান নামে দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকটা দিন ধরে যে পরিমাণ কষ্ট করছি, এতে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা প্রিন্সিপালের অপসারণ, সজলকে গ্রেপ্তার ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে ক্লাস বর্জন করেছি। আমাদের এসব দাবি কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মামলার ক্ষেত্রেও কোনো শিক্ষক দায়ভার নিতে চাননি। পরে আমি বাদী হয়ে মামলা করি। একজন শিক্ষকও এসে আমাদের খোঁজ নেননি।ক্লাস বর্জনের বিষটির সত্যতা নিশ্চিত করেন আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত উল হাসিন। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে নিয়ে ডিসি স্যার, এসপি স্যারের কাছে গিয়েছি, কথা বলেছি। ঢাকায় ডিজি স্যারের কাছে গিয়েও কথা বলেছি।শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার বিষয়ে কি উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, আমি তো কলেজে যেতে পারি না। আবার ঢাকায় ডিজি অফিসে গিয়েছি, ছুটিও ছিল। আমার পরিবর্তে এখন ভাইস প্রিন্সিপাল মীর ওমর ফারুক আছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আগামী ১৭ তারিখ থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। এ বিষয়ে কথা বলতে উপাধ্যক্ষ মীর ওমর ফারুকের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনিসুল ইসলাম বলেন, তদন্ত চলমান আছে। মামলার অভিযুক্ত সজল এখনও গ্রেপ্তার হননি। তাকে খোঁজা হচ্ছে, তবে সে বগুড়া বা আশেপাশের জেলায় নেই।বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ (পরিদর্শক) হাসান মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীরা আজকেও বিক্ষোভ করেছেন। তাদের বিক্ষোভকে আইজিপি স্যারের নজরে আনার একটা ইচ্ছা হয়তো ছিল। কিন্তু তারা রাস্তায় নামা বা কোনো ঝামেলা করেননি।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, আইএইচটি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন। এ জন্য আমরা সরাসরি কিছু করতে পারি না। তবে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি পাওয়ার পরপরই আমরা ঊর্ধ্ব নদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে ঢাকা থেকে একটি টিম আসতে পারে। তারা এলে শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্লাস বর্জনের বিষয়গুলোর সুরাহা হতে পারে বলে আশা করছি।