কেএমপি সদর দফতরে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের উদ্বোধন
বাবুল আকতার, খুলনা ব্যুরো: খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে কেএমপি সদর দফতরের প্রবেশ মুখে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ উদ্ধোধন করা হয়েছে । কেএমপির পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক এ কর্ণারের উদ্বোধন করেন। ১৮ অক্টোবর বুধবার কেএমপি সদর দফতরের মূল ভবনের নীচ তলায় প্রবেশ মুখে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ উদ্বোধন করা হয়।খুলনা মেট্রোপলিটর পুলিশের প্রতিটি পুলিশ সদস্য, সিভিল স্টাফ ও আগত দর্শনার্থীদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অবগত করতে, তাঁর আদর্শকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণে এ কর্ণারটি স্থাপন করা হয়েছে। আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, জীবনাচার, রাজনৈতিক দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবিসংবাদিত ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা দেবে এ কর্ণার।বঙ্গবন্ধু কর্ণারের দেয়াল সজ্জিত হয়েছে তাঁর ঘটনাবহুল আটপৌঢ়ে পারিবারিক জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের তাৎপর্যময় নানা আলোকচিত্র দিয়ে। শুরুতেই রয়েছে তার বংশ পরিক্রমা। দক্ষিণের দেয়ালে জীবনের সংক্ষিপ্ত রুপরেখা। এ পরেই পুরো দেয়াল জুড়ে রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন পুলিশের সাথে জড়িয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় মুহূর্তের দুর্লভ সব স্থিরচিত্র। পুলিশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিলো গভীর মমত্ববোধ আর ভালোবাসা। তিনি স্বাধীনতা-উত্তর কালে ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাজারবাগে এক দিকনির্দেশনামূলক ভাষন দেন, আছে সে ভাষণের চুম্বক অংশ। দেয়াল জুরে স্থাপিত বুক শেল্ফগুলোতে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘করাগারের রোজনামচা’ বইগুলো। আরও রয়েছে মুজিব পিডিয়া, সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহসহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত বিশিষ্ট লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বই। উত্তর পাশের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা জাতির পিতার আবেগঘন চিঠি। বঙ্গবন্ধু কর্ণারের ক্ষুদ্র আয়োজনে বাদ পরেনি বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র শেখ রাসেলসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ছবি। প্রতিটি নিদর্শনের শৈল্পিক উপস্থাপনা এর নান্দনিকতায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। এভাবেই শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ছোঁয়ায় তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে।এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো, সোভিয়েত নেতা নিওনিদ ব্রেজনেভ, জাতিসংঘের মহাসচিব কুট ওয়াল্ডহেইম, মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, মহাত্মা গান্ধী, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুং, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতের ঐতিহাসিক মুহূর্তের বিভিন্ন ছবি স্থান পেয়েছে মুজিব কর্ণারের বাইরের অংশের দেয়ালে।স্থান পেয়েছে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শরণার্থীদের ছবি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণকালীন ছবি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবি, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ছবি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি এবং জাতিসংঘে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আলোকচিত্র। এছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পুলিশ একাডেমি সারদাতে আউটসাইড ক্যাডেটদের সমাপনী কুজকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, অভিভাধন গ্রহণ, স্বাধীন বাংলার নবগঠিত পুলিশ বাহিনীর আইজিপির সাথে মতবিনিময়ের মাহেন্দ্রক্ষণগুলিও সাদাকালো ফ্রেমে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের দেয়ালে। রয়েছে ফটোগ্রাফের পাশাপাশি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদশর্নীর জন্য ডিজিটাল মনিটর।কেএমপি সদর দফতরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্ণারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানাতে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই কর্ণার। এ সময় তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মারণ করেন জাতির পিতা এবং ১৫ আগস্টে শহীদ তাঁর পরিবারবর্গকে। বিশেষভাবে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র শেখ রাসেলকে। শেখ রাসেল দিবসে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের উদ্বোধন করতে পেরে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।এসময় জাতির পিতার জীবনাদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে সততার সাথে সরকারি দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।বক্তৃতায় পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, কেএমপি সদর দফতরে আগত দর্শনার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ ব্যবহার করতে পারবেন এবং বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ পাবেন।বঙ্গবন্ধু কর্ণারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিবৃন্দ।