মতলবে লঞ্চে শুরু হয়েছে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা
মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: আর মাত্র কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। আর ঈদের ছুটি মানেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতা। মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একটু সময় কাটাতেই যেন মানুষের এ ছুটে যাওয়া। তাই তো পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে তীব্র গরম ও যানজট উপেক্ষা করে নদীপথে ঘরমুখী হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ফিরছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চযোগে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণে ফিরতে শুরু করেছে হাজারো মানুষ। আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টা পর পর যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভিড়ছে লঞ্চ।১৩ জুন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মতলব উত্তরের ষাটনল, কালীপুর, দশানী, মোহনপুর লঞ্চঘাটে ঘুরে দেখা গেছে- নারায়ণগঞ্জ থেকে মতলব ও চাঁদপুরগামী লঞ্চের সংখ্যাই বেশি। আবার সিডিউলের লঞ্চগুলোও চাঁদপুর এবং মতলব থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। বেলা ১২.৫০ টায় ঘাটে আসে এমভি খান জাহান আলী। এই লঞ্চটিও অনেক যাত্রী নিয়ে ষাটনল ঘাটে ভিড়ে।নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে সকাল সাড়ে ১১টায় ষাটনল ঘাটে আসে এমভি ময়নামতি। এই লঞ্চের যাত্রী ছিল তিন শতাধিক। এর একঘণটা পর ১২.২০টায় লঞ্চঘাটে ভিড়ে এমভি মকবুল-২। এই লঞ্চটিতে প্রচুর যাত্রী ছিল। লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার লঞ্চঘাট, মতলব উত্তরের ষাটনল, দশানী, মোহনপুর, আমিরাবাদ ঘাট হয়ে চাঁদপুর লঞ্চঘাট গিয়ে যাত্রী নামায়।মতলব উত্তর উপজেলার দেওয়ানজীকান্দি গ্রামের হাসিবুল ইসলাম শান্ত জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি এসেছি। যদিও লঞ্চে যাত্রী বেশি থাকাতে কষ্ট হয়েছে, তবে ঈদ আনন্দের কাছে তা কিছুই নয়। কারণ লঞ্চের চাইতে সড়ক পথে ভ্রমণ আরও বেশি কষ্টের।প্রবাস থেকে বাড়িতে এসেছেন মতলব দক্ষিণ উপজেলার মোবারক হোসেন। তিনি জানান, আমি গতমাসে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসেছি আমার সন্তান ঢাকায় পড়াশোনা করে তাই ঢাকাতেই থাকা হয়। তাই স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কুরবানি দিতে লঞ্চযোগে বাড়িতে যাচ্ছি। লঞ্চে যাতায়াত করতে অনেক সুবিধা ও আরাম রয়েছে বলে জানান তিনি।রফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জে রাজমিস্ত্রির কাজ করি তাই ঈদের আগেই মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। রিয়াজুল হাসান নামে এক সেনা সদস্য বলেন, মা-বাবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন ও আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার লক্ষ্যে কুরবানি দিতে ছুটি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে আগেই আসলাম। সন্তানরাও দাদা-দাদির সান্নিধ্য পাবে।স্বামীর চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন রহিমা বেগম। তিন সন্তানকে নিয়ে লঞ্চে করে মতলবে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। তবে শ্বশুর পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়িতে এসেছি। ঈদ আসলেই সন্তানরা বাড়ির অপেক্ষায় থাকে। বাড়িতে ঈদ উদযাপন করলে আমাদের চাইতে শিশুরা বেশি আনন্দ পায়।শিশু রূহান হাসান থাকে ঢাকায়। বাড়ি মতলব উত্তরের এখলাসপুরে। বাবার সঙ্গে পুরো পরিবার সদস্যরা লঞ্চযোগে বাড়ি যাচ্ছেন রূহান জানায়, বাবা-মার সঙ্গে লঞ্চে আসার উদ্দেশ্যে হচ্ছে দাদা-দাদির সঙ্গে ঈদ করা। কারণ বাড়িতে না আসলে ঈদের আনন্দ বুঝা যায় না। ঈদে অনেক মজা করবো। ষাটনল লঞ্চ ঘাটের ইজারাদার মো. ইমন বলেন, যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছাতে সার্বিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়লে যাত্রীদের সুশৃঙ্খলভাবে নামতে সহযোগিতা করা হচ্ছে।বেলতলী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাবর আলী খান বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে লঞ্চঘাটে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদী পথে নিরাপত্তার জন্য নৌ পুলিশ সদস্যরা টহলে রয়েছে। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারেন সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে এবং নৌ পুলিশ কাজ করছে।