চাপিয়ে দিয়ে নয় সহযোগিতামূলক কাজের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া হবে: ইউজিসি চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) চাপিয়ে দিয়ে নয় বরং সহযোগিতামূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ায় বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কারো উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিয়ে কাজ আদায়ে আমরা বিশ্বাসী নই। সকলের সহযোগিতামূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। আলাপ-আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে কী করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখতে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হবে।৩ নভেম্বর রোববার বিকালে মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের (এমডব্লিইইআর) নেতৃবৃন্দ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। এমডব্লিইইআরের আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ, যুগ্ম-আহ্বায়ক এনায়েত উল্লাহ কৌশিক, ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি জীম মণ্ডল ও লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি জাহিদ রাকিব উপস্থিত ছিলেন।এমডব্লিইইআরের পক্ষ থেকে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশন তথা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের রূপান্তর করা, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু করা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৭৫ শতাংশ অভিন্ন সিলেবাস বাস্তবায়ন, ইউজিসি আইন ১৯৭৩ সংশোধন ও বেসরকারি বিশ্ববিদালয় আইন-২০১০ সংশোধনসহ ২৬ দফা লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।প্রস্তাবগুলো পড়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, এসব প্রস্তাব গবেষণালব্ধ ও বাস্তবধর্মী। অনেকগুলো প্রস্তাব আমাদের হৃদয়ে স্পর্শ করেছে। আমরা এগুলো প্রত্যেক সদস্যের কাছে পাঠয়ে দিয়েছি। আমরা সকলে মিলে প্রস্তাবগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করবো। বিশেষ করে অনেক প্রস্তাব আমাদের চিন্তার সঙ্গে সমন্বয় রয়েছে। উচ্চশিক্ষাখাতে প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা এগুলো আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবো। পরবর্তীতে এমডব্লিইইআরসহ প্রত্যেকটি অংশিজনের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এমডব্লিইইআরের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশন তথা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা, ২. অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কার্যক্রম সচল করা, ৩. ইঞ্জিনিয়ারিং, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্র্যাডিড পদ্ধতি অভিন্ন করা, ৪. সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন সিলেবাস করা, তথা ৭৫ শতাংশ সিলেবাস ইউজিসিভুক্ত হওয়া, ৫. বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেসরকারির মতো বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তা তদারকি করে ব্যবস্থা নেওয়া, ৫. সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষায় ভাষা ও সিলেবাস অভিন্ন করা, ৬. মাস্টার্সে গবেষণাভিত্তিক পড়াশোনায় জোর দেওয়া। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বেতন/ভাতা বা অন্যভাবে অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা, ৭. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলাম আধুনিকায়ন করা, ৮. ইউজিসির পক্ষে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিকের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করা, ৯. বাজেট বরাদ্দে যুগোপযোগী এবং সাবজেক্টভিত্তিক যথার্থ অর্থায়ন করা, ১০. ইচ্ছেমত ডিপার্টমেন্ট না খুলতে দিয়ে প্রকৃত প্রয়োজন অনুযায়ী ডিপার্টমেন্টের অনুমোদন দেওয়া, ১১. ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিশেষ সাবজেক্টগুলোতে সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় না দিয়ে (আইইবি, আইএবি) অ্যাক্রেডিটেশনে শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের মান বিবেচনায় ইউজিসির হস্তক্ষেপ বাড়ানো, ১২. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ১৩.বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির বিশেষ পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা, ১৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমিতি তুলে দেওয়া ও শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির অধীনে ব্যবস্থা রাখা, ১৫. ব্যক্তিখাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় না দিয়ে ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অধীনে দেওয়া, ১৬. সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত সমাবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া, ১৭. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ চালুর সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া, ১৮. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনে ব্যবস্থা নেওয়া, ১৯. বাংলাদেশের শিক্ষার মানকে মালয়েশিয়াসহ উন্নতবিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিলেবাস ও কারিকুলাম অনুসরণ করা।কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২০. কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (৮) শিক্ষার মান তদারকি করা ও বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা নেওয়া, ২১. গবেষণা নেই এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার জমিও নেই, তাদের প্রয়োজন পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া। গবেষণায় সেক্টরভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো, ২২. ভেটেরিনারি ছাড়া অন্যকোন সেক্টরে ইন্টার্নির ব্যবস্থা নেই, তাই সবক্ষেত্রে ইন্টার্নির ব্যবস্থা ও এ সময় অর্থ দেওয়া। মেডিকেলের ক্ষেত্রে ২৩. মেডিকেল কলেজগুলোতে ছাত্র বা শিক্ষকদের লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়া, ২৪. বাংলাদেশের চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দেশে যে সকল কোর্স চালু আছে সে সকল কোর্সের মান উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক অ্যাক্রেডিটেশনের ব্যবস্থা করা, ২৫. মেডিকেল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মান নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বিভাগ নিয়ে আরো গভীর ব্যবস্থা নেওয়া এবং ২৬. বেসরকারি মেডিকেলগুলোর শিক্ষা ও শিক্ষককের মান উন্নয়ন করা।