বৃক্ষনিধন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
গাজীপুর (মহানগর) প্রতিনিধি: পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বনভূমি ও পরিবেশ সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৃক্ষনিধন ও শিল্প কারখানার দূষণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।২৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। পরে পরিবেশ উপদেষ্টা গাজীপুর মহানগরীর পিটিআই অডিটোরিয়ামে তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা এবং তাদের সম্মিলিত শক্তি কাজে লাগানোর লক্ষ্যে নদী রক্ষায় যুব সম্মেলন শীর্ষক এক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন।উপদেষ্টা ৫ আগস্টের পরে গাজীপুরে অবৈধভাবে দখল হওয়া ৯০ একর বনভূমির মধ্যে ১৬ একর ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসকদের বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।তিনি আরও বলেন, বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা জানি। আগামী তিন মাসের মধ্যে দখল হওয়া জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সব দিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নবায়নের সময় জনগণের মতামত নিতে হবে।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যত যাতায়াত করে তার অর্ধেকের বেশি নদী পথে যাতায়াত করে। এখনো মরে যাওয়া, দখল হওয়া নদীগুলো আমাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে জলবায়ুর মতো ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে তরুণ প্রজন্ম।উপদেষ্টা আরও বলেন, এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে পড়ে। ফলে কোনো কোনো নদীতে তিন থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের আস্তর পড়ে যায়। যেগুলো আর পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। একটি প্লাস্টিকে যে পরিমাণ কেমিক্যাল দেওয়া হয়, কিন্তু রিসাইকেল করার সময় কেউ চিন্তা করে না যে, এই কেমিক্যাল গুলো কি হবে। এই প্লাস্টিক গুলো নদীতে গিয়ে ভেঙে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়। এই প্লাস্টিকগুলো মাছ খায়। পরে এসব আমাদের রক্তে ও মায়ের দুধে মিশে যায়। এগুলোকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।পলিথিনের ব্যাগের বিষয়ে বলেন, আমাকে অনেকেই বলে প্লাস্টিকের ব্যাগতো এখনো বন্ধ হয়নি। আমি বলি, আপনি যখন বাজারে যান দোকানদার যখন আপনাকে পলিথিন ব্যাগ দেয় আপনি ওটা নেন৷ আপনি ক্রেতা হিসেবে বলেন, এটা নিব না, এটা নিষিদ্ধ ২২ সাল থেকে। আপনার বাবা দাদারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। আপনি কেন বাসায় থেকে একটি চটের ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন না।নদী দখল নিয়ে বলেন, নদীকে একটি সুন্দর প্রাণ ব্যবস্থা হিসেবে দেখতে হবে। আমরা কি নদীর সৃষ্টি করতে পারি? যদি সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলে কেন ধ্বংস করি। নদীগুলোকে শিল্প কারখানার ভাগাড়ে পরিণত করার কোনো অধিকার কোন শিল্প মালিকদের দেয়া হয়নি। বিশ্বের কোথাও কোনো দেশে কোনো মালিককে এই অধিকার দেওয়া হয়নি। তার ব্যবসায়িক লাভের জন্য বর্জ্য নদীতে ফেলার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেনের সঞ্চালনায় সম্মেলনের শুরুতেই ভাচ্যুয়ালী বক্তব্য রাখেন গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট সেন্টার মালয়েশিয়ার ম্যানেজার ড. কালিদাসান কালিসাম।বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরি মো. যাবের সাদেক, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশ কাটার সাকশন ড্রেজার ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বশির আহমেদ, বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না, ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. সোহরাব হোসেন প্রমুখ।