• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:১০:৩৭ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:১০:৩৭ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

ধর্মপাশায় বৌলাই নদীর ভাঙনে বিলীন ১ হাজার ঘরবাড়ি, হুমকির মুখে সরকারি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: কপালে চিন্তার ছাপ বৌলাই নদীর পাড়ের মানুষের। পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। ভাঙন চলে প্রায় সারা বছরই। তবে বর্ষা শুরু হলেই গতি বাড়ে ভাঙনের। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ইসলামপুর, শান্তিপুর, শরীয়তপুর, গোলকপুর, নুরপুর ও বাবুপুর গ্রামের প্রায় হাজারের মতো বাড়িঘর, জমিজমা ও একই ইউনিয়নের বৌলাইগঞ্জ বাজারের ৫০ থেকে ৬০টি দোকান ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।নদী ভাঙনের কবল থেকে বাদ যায়নি মসজিদ ও প্রাইমারি স্কুল। তাছাড়া দুই শতাধিক বাড়িঘর ও বৌলাইগঞ্জ বাজারের ১৫-২০টি দোকান ঘর এখন নদীর ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। বসতবাড়ি, জমি রক্ষায় বাঁশ দিয়ে নদীতে বাঁধ দিয়েছেন গ্রামবাসী। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না নিলে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বেশ কয়েকটি গ্রাম। তাই নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে নদীর পাড়ে টেকসই বেরিবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুরমা নদীর যে অংশ বৌলাইগঞ্জ বাজারেরর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সেই অংশটিই বৌলাই নদী। অন্য অংশের নাম সুরমা নদী। নদীটি সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের শরীয়তপুর গ্রামের উত্তর পাশ থেকে শুরু হয়ে পাশের জামালগঞ্জ উপজেলার গজারিয়ার মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার বিস্তৃত। নদীটির পূর্ব পাশে ফেনারবাক ইউনিয়ন আর পশ্চিম পাশে সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন। সারা বছরই পানি থাকে এই নদীতে। নদী ভাঙনের ফলে প্রায় ৭০০ পরিবার আশেপাশের কৃষি জমিতে বসতি স্থাপন করেছে। নিজের জমিতে নদী ভাঙনের ফলে পাঁচ থেকে ছয় বার করে ঘরের জায়গা পরিবর্তন করতে হয়েছে তাদের। প্রায় ৩০০ পরিবার স্থানান্তরিত হয়ে এ অঞ্চল থেকে অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছে। কেউ কেউ ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর ছাড়া। নদীটির পশ্চিম পাড় ভেঙে পূর্ব পাড়ে চর জেগে  উঠেছে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই নদীর ভাঙন চলছে। তবে গত পাঁচ বছর ধরে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নদী ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে বোলাইগঞ্জ বাজারের অন্তত ৫০টি দোকানঘর বিলীন হয়ে গেছে। ১০-১২টি দোকানঘর ও বাজারের উত্তর পাশে থাকা বাবুপুর গ্রাম, মসজিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।নুরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, এই পর্যন্ত নদী ভাঙনে অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ এই নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি বাঁধের ব্যবস্থা করত তাহলে এই এলাকার মানুষ বসতি, ফসলের জমি হারানো থেকে রক্ষা পেত।নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ইসলামপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, এক বছর ধইরা অন্যের বাড়িতে থাহি (থাকি)। কাম কইরা সংসার চালাই। নদীর ভাঙন শুরু হইলে সব ভাসাইয়া লইয়া যায়। সরকার যদি আমাদের দিহে একটু তাহাইতো।শরীয়তপুর গ্রামের ভুক্তভোগী বারেক মিয়া বলেন, নদী ভাঙনে অনেক পরিবারই আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। অহন ছেলে ও ছেলের বউরে লইয়া অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিছি।সাবেক চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই এই নদী ভাঙন দেখা বড় হয়েছি। আমি যখন ইউপি চেয়ারম্যান ছিলাম, বিভিন্ন ফোরামে নদী ভাঙনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। বিশেষ করে, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। তবে কেন নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না, তা আমার বোধগম্য নয়।সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা দিপা বলেন, আমার ইউনিয়নের ১ হাজার বাড়িঘর, তিন শতাধিক একর জমি, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিন শতাধিক পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুক পারি সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এখনো চার শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ওই গ্রামগুলোসহ একটি বাজার বিলীন হয়ে যাবে।ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. অলিদুজ্জামান বলেন, নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরপরই ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করব।