• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সন্ধ্যা ০৭:৪১:৩২ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সন্ধ্যা ০৭:৪১:৩২ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

‘হামার বয়স্ক ভাতার ট্যাকা মেরে দিলেন দোকানদার’

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কোলা গ্রামের ফুল মোহাম্মদ সরকারি সুবিধাভোগী হিসেবে তিনি বয়স্ক ভাতা পান। মোবাইলের নগদ অ্যাকাউন্টের টাকা তুলতে গিয়েছিলেন আলহেরা টেলিকম নামক নগদ এজেন্টের দোকানে। কৌশলে তার ভাতার টাকা মেরে দিয়েছেন সেই দোকানের মালিক জুয়েল আরমানের ভাই সুমন হোসেন। এক মাস যাবৎ এর প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে গত ২৬ জুন সমাজসেবা অফিসসহ একাধিক জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী।গত ২৯ ও ৩০ জুন এলাকায় সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা গত ২৮ মে’র দুটি ট্রানজেকশনে দেখিয়ে বলেন, বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে ১ম বার ফুল মোহাম্মদের নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে আলহেরার নগদের উদ্দোক্তার নাম্বারে ১৮১৪ টাকা ১৯ পয়সা ক্যাশ আউট করা হয় এবং পরে ৫টা ১৯ মিনিটে একই নাম্বারে আরও ১৮০০ টাকা ক্যাশ আউট করা হয়। কিন্তু সুমন ১৮০০ টাকা ভাতাভোগীর হাতে দেন এবং বাকি ১৮১৪ টাকা ১৯ পয়সা সুমন কৌশলে আত্মসাৎ করেন।ফুল মোহাম্মদের জরাজীর্ণ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দরজার সামনে বসে আছেন প্রতিবন্ধী স্ত্রী শরিফা। তিনিও সরকারি সুবিধাভোগী হিসেবে প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তিনি জানালেন, শেখ হাসিনা টাকা দেয়। সুমন সেই টাকা দেওয়ার সময় খরচ কেটে নেয়।অভিযোগে জানা যায়, গত ২৮ মে আলহেরা টেলিকম নামক নগদ এজেন্টের দোকানে ভাতার টাকা উঠাতে যান ভুক্তভোগী ফুল মোহাম্মদ। সুমন একবারের ভাতার টাকা বের করে দেন ভাতাভোগীকে। কিন্তু দুই বারের প্রাপ্য ভাতার টাকা তার মোবাইলের নগদ অ্যাকাউন্টে জমা ছিল। জানতে গেলে সুমন সেই টাকার কোনো খোঁজ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর ভুক্তভোগী বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে সুমনের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন।ফুল মোহাম্মদ বলেন, সুমনের কাছে গেলে সে আমাকে ১৮০০ টাকা ধরিয়ে দেয়। কিন্তু আমার মোবাইলে দুই বার ভাতার টাকা এসেছে। তিনি বলেন, ‘বাপো হামার ভাতার ট্যাকা মেরে দিসে দোকানদার। হ্যামি গরিব মানুষ বাপু। হামার সাথে সুমন এমনডা করলো ক্যানো? হ্যামি হামার ভাতার ট্যাকা ফেরত চাই!’আলহেরা মোবাইল টেলিকমে কথা হয় সুমনের সাথে। ভিডিও বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি। এক পর্যায়ে গর্বের সঙ্গে জানালেন, ‘আমি এই সেক্টরে খুব দক্ষ। কারো পিন কোডের সমস্যা হলে আমার কাছেই আসে। ফুল মোহাম্মদের আগের টাকা ছিল, সেটা আমার জানা ছিল না। আমি ইচ্ছে করে করিনি, কোনো কারণে হয়তো আমার ভুল হয়েছে।’এদিকে এই প্রতিবেদক তার দোকানে অবস্থাকালে একব্যক্তি আসলেন তার মেয়ের উপবৃত্তির টাকা উঠাতে। মোবাইলটা দিয়ে দিলেন সুমনের হাতে। কোনো কিছু না বলাতেই কিছু টাকা বের করে দিলেন।একইভাবে ভিডিও বক্তব্য দিতে রাজি না জুয়েল আরমান। তবে তিনি একসময় স্বীকার করলেন, ‘পিন না দেওয়া এটা একটা ব্যবসায়িক কৌশল। কারণ, পিন না দিলে এই দোকানেই আসবে তারা। এছাড়া এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’ বিষয়টি নিয়ে কিছু করার দরকার নেই বলে অনুরোধ করেন এই প্রতিবেদককে। ১৮০০ টাকার জায়গায় ১৮১৪ টাকা ১৯ পয়সা কীভাবে ক্যাশআউট হয় এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।স্থানীয়রা জানান, সুমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পরপরই পানের দোকান থেকে জুয়েলের অর্থ সম্পদ নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে সর্বত্র! তাদের ধারণা বছরের পর বছর এইভাবে প্রতারণা করে সে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।স্থানীয় জনি নামের এক নারী জানান, তাদের আগে ছিল পানের দোকান। এখন কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।আরেক ব্যবসায়ী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হতদরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিচ্ছে। আর সহজ সরল ওই সব হতদরিদ্রদের পিন কোড নিজের কাছে রেখে বছরের পর বছর কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করছে। মেসেজ ডিলিট করে দেওয়া ও পিন নং না দেওয়া তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’কোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুর ইসলাম স্বপন মুঠোফোনে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে এর আগেও মৌখিক অনেক অভিযোগ ছিল, কিন্তু প্রমাণ ছিল না। এবার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর সুমনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হওয়া উচিত বলে তিনিও মন্তব্য করেন।’উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাজীব আহম্মেদ মুঠোফোনে বলেন, ‘ভাতাভোগী ফুল মোহাম্মদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে গিয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে তার সত্যতা পেয়েছি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এরকম হতদরিদ্রদের টাকা যারা মেরে দেয়, তাদের বিচার হওয়া উচিত। আমরা বিষয়টি নগদকে জানিয়েছি, এখন তারা পদক্ষেপ নেবেন।’