দেশ সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
লেখক. আনসারুজ্জামান সিয়াম: ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ নতুন একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, খুন, গুম, হত্যা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। আগামীর রাষ্ট্রের মূল নিয়ামক শিক্ষার্থীরা। দেশ সংস্কার নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন আনসারুজ্জামান সিয়াম।নাগরিক বান্ধব সংস্কার প্রয়োজন-যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাঁড়া করা যাবে, ততবার তা পড়ে যাবে: কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলের এই শাশ্বত বাণীই যেন হোক আমাদের দেশ সংস্কারের মূলমন্ত্র। বর্তমান দেশ পরিচালনার সমস্ত ক্ষেত্রই দুর্নীতির জালে আবদ্ধ। মন্ত্রণালয়, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি খাতসমূহের দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। যে সংস্কার হবে একান্তই নাগরিক বান্ধব। যেখানে থানায় গেলে কেউ ঘুষ চাইবে না, ন্যায় বিচার পেতে দিনের পর দিন আদালত চত্বরে স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠবে না, থাকবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং উচ্চমহলের মতামত গ্রহণ করার সহনশীলতা। শিক্ষার্থীরা শিক্ষালয়ে যাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে, কারো দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করতে নয়। সর্বোপরি, আইন সংবিধান মোতাবেক ন্যায় বিচার ও সমান অধিকারের ভিত্তিতে নতুন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই হবে দেশ সংস্কারের মূল লক্ষ্য।(মোছা. শামিমা ইয়াসমিন সুমি, ৪র্থ বর্ষ, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা জরুরি-স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। রাষ্ট্রকে সংস্কারের জন্য সর্বপ্রথম আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি। এর সুফল যদি আমরা স্থায়ীভাবে পেতে চাই তাহলে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের জন্য যেসব কাজ করছে তা নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব বিষয়ে যখন একজন ছাত্র-ছাত্রীর অভিজ্ঞতা থাকবে। তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো অহংকার থাকবে না। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। এমনকি তাদের বাবা মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ ও ব্যভিচারের সাথে জড়িত হওয়ার সাহস পাবে না। কারণ তারা জানেন, তাদের বাসায় ম্যাজিস্ট্রেট আছে, ট্র্যাফিক আইন অমান্য করবে না কারণ, তাদের বাসায় একজন ট্র্যাফিক পুলিশ আছে। প্রতীকী নয় এখন বাস্তবেই শিক্ষার্থীদের সব ধরনের কাজে অন্তর্ভুক্তকরণ সময়ের দাবি। প্রত্যেক সপ্তাহে একদিন প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য সহকারী শিক্ষকদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সাথে হাতে হাত রেখে এসব কাজ করতে পারেন। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশকে ইউরোপের কাতারে নিয়ে যেতে আমাদের বেশি সময় প্রয়োজন হবে না।(মো. সাঈদ হাসান, ৩য় বর্ষ, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার)সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সংস্কার প্রয়োজন-দেশ সংস্কার একটি জটিল ও ধীর প্রক্রিয়া যা সামগ্রিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। একটি সফল সংস্কার উদ্যোগের জন্য সুশাসন, শিক্ষা, ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অপরিহার্য। ন্যায়বিচার, দুর্নীতি রোধ, ও সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। জনগণের অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত নীতিমালা দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে সংস্কার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।(মুক্তামনি সান্ত্বনা দীপ্তি, ৩য় বর্ষ, ফার্মেসি বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)সবার আগে শিক্ষার সংস্করণ জরুরি-বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য সর্বপ্রথম এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। একদম প্রাথমিক স্তর হতে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটা ধাপে ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। এইজন্য অতিসত্বর বর্তমানে চলমান অন্তঃসারশূন্য শিক্ষাক্রম বাতিল করে মানসম্মত, আধুনিক ও বাস্তবমুখী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ, ব্যাবহারিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রসারও দরকার, তবে এখনই ডিজিটাল ডিভাইসের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। একইসাথে শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণা ও উদ্ভাবনমুখী করে তুলতে হবে। সর্বোপরি, শিক্ষক ও ছাত্র উভয়কেই দলীয় রাজনীতিমুক্ত থাকতে হবে। শিক্ষা সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা সময়ের সাথে সাথে ফল প্রদান করবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।(মো. পারভেজ রহমান, ৫ম বর্ষ, এমবিবিএস, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল)(লেখক. শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়)