শীতকাল মুমিনদের জন্য রহমত ও বরকত
এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ: ইসলামের দৃষ্টিতে শীতকাল মুমিনদের জন্য বিশেষ রহমত ও বরকতের সময়। হাদিসে শীতকালকে মুমিনদের বসন্তকাল বলা হয়েছে, কারণ এই ঋতুতে ইবাদত-বন্দেগি সহজ হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে-ঋতু (গরম/শীতকাল) পরিবর্তন হওয়া আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন। তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান? আর তিনি সূর্য ও চাঁদকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলতে থাকে এবং তোমরা যা কর, আল্লাহ তা ভালোভাবেই জানেন। [সূরা লুকমান: ৩১-২৯]শীতকাল সম্পর্কে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে-১. শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল:রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শীতকাল হলো মুমিনের বসন্তকাল। এর দিনগুলো ছোট, তাই রোজা রাখা সহজ; আর রাতগুলো দীর্ঘ, তাই তাহাজ্জুদ পড়া সহজ। [মুসনাদ আহমাদ: ১৮৯০৩, শুআবুল ইমান: ৩৪৩৪]হাদিসের মূল কথা:ক. শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় রোজা রাখা সহজ হয়।খ. রাত দীর্ঘ হওয়ায় তাহাজ্জুদসহ নফল ইবাদতের সময় বেশি পাওয়া যায়।২. গুনাহ মোচনের সুযোগ:আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিনের জন্য যা কিছু কষ্টদায়ক হয়, তা তার পাপ মোচনের মাধ্যম হয়ে যায়। [সহিহ মুসলিম: ২৫৭৩]হাদিসের মূল কথা: শীতের কষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করলে আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে গুনাহ মাফ করেন।৩. আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ সুযোগ:হজরত উমর (রা.) বলেছেন, শীতকাল ইবাদতকারীদের জন্য বিশেষ নিয়ামত, কারণ এর রাতগুলো দীর্ঘ এবং দিনগুলো ছোট। [ইবনে আবি শাইবা: ৭/১৮২]শীতকালে মুমিনদের করণীয়-১. রোজা রাখা:শীতকালের ছোট দিনে রোজা রাখা সহজ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রোজা জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা। [সহিহ বোখারি: ১৮৯৪]২. তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদত করা:দীর্ঘ রাতকে কাজে লাগিয়ে তাহাজ্জুদ পড়া এবং কুরআন তিলাওয়াত করা মুমিনের জন্য বিশেষ ফজিলতের কাজ।৩. শীতার্তদের সাহায্য করা:রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রয়োজন মেটায়, আল্লাহ তাআলা তার প্রয়োজন পূরণ করেন। [সহিহ মুসলিম: ২৫৮০] শীতকালে গরিব ও দুঃখীদের শীতবস্ত্র দেওয়া বা তাদের কষ্ট লাঘব করা সাদাকার অন্তর্ভুক্ত।৪. অতিরিক্ত ইবাদতে মনোযোগ দেওয়া:শীতকালের কষ্ট ও সীমাবদ্ধতাকে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগে পরিণত করা উচিত। শীতকালে মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। এটি ধৈর্য, আত্মশুদ্ধি এবং ইবাদতের সুযোগ এনে দেয়। যারা এই সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাবে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।লেখক- এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ,মুহাদ্দিস: জামিয়া ইসলামিয়া মারকাযুদ দ্বীন, তিতাস, কুমিল্লা।