১৩ এপ্রিল: থানাপাড়াবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয় একাত্তরের ভয়ানক দিনের কথা
রাজশাহী প্রতিনিধি: আজ ১৩ এপ্রিল, রাজশাহীর চারঘাট গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে অস্ত্রসজ্জিত বর্বর পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলা ও গুলিবর্ষণে চারঘাট উপজেলার কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক বেসামরিক মানুষ শহীদ হন। আহত হয় আরও কয়েকশত মানুষ। শুধু গুলি করে ক্ষান্ত হননি, পেট্রল ঢেলে মৃত শরীর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো পাক হানাদার বাহিনী। সে থেকে প্রতিবছর ১৩ এপ্রিল থানাপাড়াবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয় একাত্তরের ভয়ানক দিনের কথা।প্রত্যক্ষদর্শী থানাপাড়া গ্রামের রায়হান আলী জানান, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে জীবন রক্ষার্থে গ্রাম ছেড়ে কয়েক হাজার নারী, পুরুষ ও শিশুরা সীমান্তবর্তী পদ্মা নদীর তীরে আশ্রয় গ্রহণ করে। হানাদার বাহিনী তৎকালীন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার সংলগ্ন পদ্মা নদী তীরে গিয়ে এ সকল নারী, পুরুষ ও শিশুদের উপস্থিতি দেখে তাদেরকে ঘেরাও করে। অবশেষে নারী ও শিশুদের ছেড়ে দিলেও পুরুষদের আটকে রেখে তাদের উপর গুলি বর্ষণ করে। শুধু গুলি করেও ক্ষান্ত হয়নি হানাদার বাহিনী, মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পাকিস্থানী বাহিনী এ অঞ্চলে জেনোসাইড শুরু করে। এতে নিহত হন থানাপাড়া, কুঠিপাড়া, গৌরশহরপুর, বাবুপাড়া ও তৎকালীন পুলিশ ট্রেনিংয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ২০০ নিরস্ত্র বেসামরিক পুরুষ।এসময় প্রতিটি পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা, ভাই অথবা স্বামী কেউ না কেউ; এই গণহত্যার শিকার হন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিধবার গ্রাম হিসেবে পরিচিত পাওয়া থানাপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জন্য তৎকালীন ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রী ও জাতীয় নেতা শহীদ কামরুজ্জামানের সুপারিশে দা সোয়ালোজ, সুইডেন নামে বিদেশী সংস্থা আত্ম-কর্মসংস্থান সুযোগ করে দেয়, যা আজ অবধি চলমান রয়েছে। যেখানে এখনও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রায় কয়েক শত নারী ও পুরুষ।বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাররম হোসেন বলেন, এই গণহত্যা দিনটি সরকারি দিবস হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি দেয়া উচিত। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারিভাবে কোন ধরনের আর্থিক সহযোগীতা পায় না। কোন কোন সময় নামমাত্র কিছু বরাদ্দ থাকলেও সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পাচ্ছে না বলে তিনি জানান।দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপজেলা শাখা, থানাপাড়া সোয়ালোজ ও উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ শহীদদের স্মৃতি সম্বলিত শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে সম্মান জানান। শহীদদের স্বরণ করে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।