লালমনিরহাটে হাবিবের তৈরি রোবট মানুষের মতো হাঁটতে পারে
হাতিবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি: তরুণ গবেষক আহসান হাবিবের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মানিক বাজার এলাকায়। ছোট বেলা থেকেই তার চিন্তা এমন কিছু বানাবেন, যা দিয়ে বিশ্বের বুকে নিজ দেশকে পরিচিত করে তুলবেন। গল্প তরু রোবটটি হাঁটতে, কথা বলতে, খাবার পরিবেশন, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন এবং বৃদ্ধদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতে পারবে।তার তৈরি রোবট গল্প তরুকে দেখতে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা তার বাড়িতে ভিড় জমান। রোবটের বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষমতা দেখে বিস্মিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী। প্রশ্ন করলেই মিলছে উত্তর। সব প্রশ্নের উত্তর নির্ভুল উত্তর দিচ্ছে রোবট গল্প তরু।দেখা গেছে, আহসান হাবিবের তৈরি রোবট গল্প তরু স্থানীয় মানিক বাজারে নিয়ে এসে প্রকাশ্যে সবার সামনে হটাচ্ছেন। এটি দেখতে শতশত উসুকমানুষ ভিড় করছেন।গল্প তরুকে একের পর এক বাংলা ও ইংরেজি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। সালাম দিলে জবাব দিচ্ছে সালামের। রোবট গল্প তরু নিয়ে পরিচয় ও জন্ম স্থানের কথা বলছেন। চলাফেরাও করছে রোবটটি। এরপর সুইচ অন করে আপনার ইচ্ছে মত করা প্রশ্নের উত্তর দেয় রোবটটি। ব্যাটারি ও অ্যাপসের সাহায্যে চলে রোবটটি।আহসান হাবিব লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি গ্রামের মৃত মজু মিয়া ও খালেদা বেগমের ছেলে। পরিবারে দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আহসান হাবিব সবার ছোট। অভাবের সংসার। নিজেদের জায়গা-জমি বলতে আছে শুধু তিন শতক জমির ওপর বসতভিটা। বড়ভাই খাইরুল ইসলাম পেশায় একজন শ্রমিক।২০১২ সালে একটি দুর্ঘটনায় মারা যান হাবিবের বাবা মজুমিয়া। সে থেকে শুরু হয় সংসারের অভাব অনটন। বড় ভাইয়ের দিনমজুরি টাকা ও হাবিবের টিউশনি টাকা দিয়ে শুরু হয় পড়াশোনা ও রোবট তৈরির কাজ। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আহসান হাবিব ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নতুন কিছু আবিষ্কার করার নেশা।২০২২ সালে চিট্টি নামে একটি রোবট তৈরি করে সারা ফেলেন হাবিব। এর পর তৈরি করেন সুফিয়া, পারিসা নামে আরো কয়েকটি রোবট। রোবট তৈরিতে পেয়েছেন বিভিন্ন স্থানে প্রথম পুরস্কারও।আহসান হাবিবের এই প্রতিভা দেখে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি ঢাকা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনার ১০০% স্কলারশিপ প্রদান করেন। বর্তমানে হাবিব ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।আহসান হাবিব বলেন, গল্পতরু বাংলাদেশ প্রথম রোবট এটি মানুষের মত হাঁটতে পারে কথা বলতে পারে। হাঁটা রোবট দেশে নেই বলতে চলে। এ রোবট মানুষকে সহযোগিতাসহ একাধিক কাজ করতে পারবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কাছে এই রোবটটিকে আমি তুলে ধরতে চাই। এ কাজে আমার মা, বড় ভাই, বন্ধুরাও আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছে।হাবিবের মা খালেদা খাতুন বলেন, অনেক কষ্ট করে হাবিব বড় হয়েছেন। তার বাবা মারা যাওয়ার পর তার বড় ভাই তাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। হাবিব টিউশনি করা টাকা দিয়ে রোবট তৈরি করেন। রোবট তৈরিতে অনেক ঋণ হয়েছে। সবার অনুরোধ আমার ছেলেটাকে একটু দেখবেন।কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, তরুণ উদ্যোক্তা আহসান হাবিবের রোবট তৈরির প্রতিভা আমরা জেনেছি। সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকাল টেকনোলজি ব্যবহার করে আউটপুট দেখিয়ে রোবট তৈরি করেছেন। সেই ইতিমধ্যে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করলে আমরাও খুশি হব।