নিরাপত্তা সংকটে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ চত্বর
মিরপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কারণে ও বেতনের টাকা বরাদ্দ না থাকায় পূর্ব থেকে নিযুক্ত আউটসোর্সিং নিরাপত্তা কর্মীরা কাজে যোগ দিচ্ছে না। এতে চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন ও ক্যাম্পাসসহ গোটা হাসপাতাল চত্বর।কর্তৃপক্ষ আনসার সদস্য নিয়োগের জন্য চিঠি দিলেও তাদের বেতন কোন প্রতিষ্ঠান দেবে তা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিক্যালের মূল গেটসংলগ্ন নিরাপত্তা কর্মী কক্ষটিতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।সরেজমিনে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সদ্য নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া হাসপাতাল চত্বরটিতে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার সাজ-সরঞ্জামসহ নানা ধরনের সরঞ্জামাদি ছড়িয়ে রয়েছে। জনমানব শূন্য হাসপাতালটি অরক্ষিত অবস্থায় আছে বলাই যায়।মূল গেট সংলগ্ন নিরাপত্তাকর্মী কক্ষটিতে তালা ঝুলছে। হাসপাতাল চত্বরটিতে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার সাজ সরঞ্জামসহ নানা ধরনের সরঞ্জামাদি যে কোনো সময় খোয়া যেতে পারে বা অনিষ্ট হয়ে যেতে পারে, এমনটা ধারণ করছে হাসপাতালের কর্মরত অনেকেই।কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে সরকারি স্টাফ নিয়মিত রয়েছেন মোট ৩৭ জন। ৩৭ জনের মধ্যে ২৮ জন মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও বাকি ৯ জন অফিস স্টাফ। অন্যদিকে অনিয়মিত শ্রমিকের সংখ্যা মোট ৩১জন। ৩১ জনের মধ্যে পরিচ্ছন্ন কর্মী সংখ্যা ৬ জন, অফিস সহায়ক ৭ জন ও নিরাপত্তা প্রহরী ১৮ জন। অনিয়মিত এই ৩১ জন শ্রমিকের বেতন বাবদ ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। বরাদ্দের ১০ লক্ষ টাকা চলতি বছরে জানুয়ারিতে শেষ হয়ে যায়। যার ফলে অনিয়মিত শ্রমিক ৩১ জনের বেতন বন্ধ রয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে।কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল ভবনের চিকিৎসা ও অন্যান্য মালামাল চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তার জন্য ৭০ জন আনসার সদস্য নিয়োগ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে পত্র দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এসব আনসার সদস্যদের বেতন বাবদ অর্থ বরাদ্দসহ আনসার নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করলেই সংকট কেটে যাবে। বর্তমানে এখানে কর্মরত অনেকেই পালাক্রমে নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত আছে।একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের ভাই কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা মেডিকেলে আউটসোর্সিংয়ে কর্মী নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার ঘনিষ্ঠ কুষ্টিয়া নাগরিক পরিষদের সভাপতি সাইফুদ্দৌলা তরুণ আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগ করেছিলেন।কুষ্টিয়া আনসার ভিডিপির সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট কাশেম আলী জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলা আনসার ভিডিপির দপ্তরে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে আনসার নিয়োগের অনুরোধ করে পত্র দিয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই জন্য আমাদের টাকা বরাদ্দ নেই। তাই আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে লিখে জানিয়েছি।কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, এখানে আগে থেকেই আনসার নেই বা এ ব্যাপারে বরাদ্দ নেই। আমরা মন্ত্রণালয়কে আগেও আনসার নিয়োগের অনুরোধ করেছি।অধ্যক্ষ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, এরই মধ্যে হাসপাতালের সামনে একটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে ছাত্রদের নিয়ে একটি নিরাপত্তা কমিটি করা হয়েছে। তারা দু-এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে। এদিকে, ২০১০ সালে যাত্রা শুরু হয় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ। তিন বছরের এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল দাঁড়িয়েছে ১৩ বছরে।গণপূর্ত কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি।উল্লেখ্য, কয়েক দশকের মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প হলো কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট নির্মাণাধীন হাসপাতাল। এটি কুষ্টিয়া রাজবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কসংলগ্ন প্রায় ২০ একর জমির ওপর নির্মিত। নির্মাণাধীন হাসপাতালের সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা থাকছে।এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা থাকছে। কলেজ ও হাসপাতাল মিলে থাকছে ২১টি বড় লিফট। ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, সিসিইউ-আইসিই্উ, অর্থোপেডিক, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলোজি, গাইনি, চক্ষু ও নাক,কান-গলাসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য আমদানি এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসাউন্ড ও এক্সরে মেশিনসহ বিদেশ থেকে আমদানি চাহিদার ৬০ ভাগ কোটি কোটি টাকার যন্ত্র-মেডিকেল সরঞ্জাম স্থাপনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।