সাপ ধরে বনে অবমুক্ত করাই সেলিমের নেশা
তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: সাপ অতি সুন্দর একটি প্রাণী। বিরক্ত না করলে এটি কারো তেমন ক্ষতি করে না। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের মনস্তত্ত্ব হচ্ছে বিষধর বা বিষহীন যেকোনো প্রকার সাপ দেখলেই সেটি মেরে ফেলতে হবে। অথচ প্রকৃতিতে ও কৃষিকাজে সাপের গুরুত্ব আমরা অনুধাবনই করতে পারি না।কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরা তালা উপজেলার ‘সাপের বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত সেলিম শেখ (৪০)। সাপ দেখলে সবাই মেরে ফেলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অথচ সাপকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এই যুবক। সাপ ধরে বনে অবমুক্ত করা যেন তার নেশা।মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকাল ৩টার পর সাংবাদিক শামীম খানের কাছে খবর আসে একটি ঘেরের আইলে জাল দেওয়া সেই জালে দুটি সাপ বেধে রয়েছে। আর অনেক লোক সেখানে জড়ো হয়ে সাপ দুটি হত্যা করার চেষ্টা করতেছে। তখন সাংবাদিক শামীম খান সাপের বন্ধু হিসেবে পরিচিত সেলিম শেখকে ফোন দিলে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক হাজির হয়ে সাপ দুটি উদ্ধার করে বনে আবু মুক্ত করে দেয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই সাপ দেখলে মায়া হতো সেলিমের। সাপ মারতে দেখলেই প্রাণে জাগতো হাহাকার। বয়স কম হওয়ায় সব জায়গায় প্রতিবাদ করার সাহস হতো না তখন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপ রক্ষার পথ খুঁজতে থাকেন। সাতক্ষীরা তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের আগোলঝাড়া গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দীন শেখের ছেলে সেলিম শেখ নিজ এলাকায় এখন পরিচিত ‘সাপের বন্ধু’ নামে। বর্তমানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংগঠন ওয়ার্ল্ড লাইফের একজন দক্ষকর্মী তিনি।তিনি তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন বিভিন্ন জাতের প্রায় অর্ধ শতাধিক সাপ। এছাড়া বিপদগ্রস্ত অন্যান্য প্রাণী রক্ষায়ও কাজ করেন সেলিম।সেলিম জানান, সাপের বিষয়ে জানতে কয়েক বছর আগে তিনি যুক্ত হন- একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংগঠন ওয়ার্ল্ড লাইফ’র সঙ্গে। সেখানে সাপ উদ্ধার ও রক্ষা সম্পর্কে নানা বিষয়ে জানাশোনা হয় তার। সংগঠনের সক্রিয় কর্মী হয়ে সাপ উদ্ধার ও রক্ষায় কাজ করছেন। আর সেলিম ওয়ার্ল্ড লাইফ থেকে একটি প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।সাপের বিষয়ে এত আগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে সেলিম বলেন, শুরুতে এ কাজে পরিবার থেকে বাধা পেয়েছিলাম। সমাজের মানুষও বাঁকা চোখে দেখত। তবে দিন দিন ধারণা বদলেছে মানুষের। সেলিম সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্য বলেন- সবাইকে অনুরোধ করবো, সাপ দেখলেই মেরে ফেলবেন না। বিষধর সাপ হলে আমাকে খবর দিন। আমি বিনামূল্যে সাপের বিপদ থেকে মুক্ত করবো আপনাদের। আর ওয়ার্ল্ড লাইফ আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।