পুনরায় স্বাধীনতার স্বাদ দিতেই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
ইমরান সিদ্দিকী প্রান্তর: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক ঘটনা। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে পাকিস্তানি দোসররা ভেবেছিলো বাংলাদেশকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে ফেলেছে। কিন্তু জনগণের ভালবাসায় সিক্ত বঙ্গবন্ধুকন্যা সমস্ত ভয়ভীতি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সুপ্ত বীজ থেকে যে বটবৃক্ষে পরিণত হবেন তা তারা কল্পনাও করতে পারেনি।১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপা। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। ফিরে এসে দেখেন, স্বাধীন বাংলাদেশে পরাধীনতার গ্লানি, স্বৈরাচারী শাসকের একনায়কতন্ত্র, ক্ষুধাকষ্ট-দারিদ্র্যে জর্জরিত করুণ বাংলা, ইমডেমনিটির মতো ঘৃণিত আইনকে একতরফা বৈধতা প্রদান৷তিনি যেন ফিরে এসেছিলেন স্বপ্ন নিয়ে, বাংলাকে পুনরায় স্বাধীনতার স্বাদ দিতে। সেজন্যই সেদিন মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিও সেদিন লাখো মানুষের মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে।মা-বাবা ভাইসহ প্রায় সকল স্বজন হারানো সর্বহারা, অসহায় শেখ হাসিনা আপা যখন দাঁড়িয়ে ছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের সামনে, তখন কীভাবে স্থির ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা? সিঁড়ি আর দেয়ালে রক্তের দাগ, মা-বাবা আর শিশু ভাইটির রক্তধারায় আলাদাভাবে চেনা যাচ্ছে না যে বাড়িটিকে। তিনি সেই বাড়িটি দেখছেন। প্রবল বৃষ্টির মাঝেও সেই সময়ের রাষ্ট্র তাকে অনুমতি দেয়নি বাড়িটিতে প্রবেশের। সেদিন বৃষ্টি আর বঙ্গবন্ধুর কন্যার চোখের জল এক হয়ে মিশেছিল বাংলাদেশের মাটিতে। অন্তরের অন্তস্থল থেকে নির্গত জলধারা তাকে দাঁড় করিয়েছিল ইতিহাসের সামনে। আর ইতিহাস তার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল জাতির জনকের কন্যার কাঁধে। দায়িত্ব নিয়ে তিনি হেঁটেছেন ইতিহাসের নির্ধারিত পথেই। বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের দিন থেকেই তার চলার পথে পথে শুধু পাথর নয়, গ্রেনেডও ছড়ানো ছিল। সেই পথযাত্রার এতোগুলো বছর পার হলেও আজো থামেনি সেই অশ্রুধারা, কমেনি তার পাথরচাপা শোকের কষ্ট।জনসাধারণের নেতা দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপা দেশে ফিরেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ের গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয় এবং বিজয় হয় গণতন্ত্রের। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। শেখ হাসিনা আপার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়।এসময় পাহাড়ি-বাঙালি দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিলের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ সুগম হয়।২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে এবং জনগণের কল্যাণে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হয়। বিশেষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়। গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি, গ্রামীণ অবকাঠামো, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পর আমরা স্বপ্ন দেখি ২০৪১ সালের মধ্যম আয়ের দেশের। আমরা স্বপ্ন দেখি ২১০০ সালের ডেলটা প্ল্যানে অর্ন্তভুক্ত পৃথিবীর অন্যতম টেকসই, শক্তিশালী ও মর্যাদাশীল দেশের। আমরা স্বপ্ন দেখি স্মার্ট বাংলাদেশের। আর এই চলার পথে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বের বিকল্প নাই।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে বলতে চাই, জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মিশনে কোনকিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হয়ে রাজপথ নিরাপদ রাখবে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও দেশবিরোধীদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত ঢাল হয়ে পাশে থাকবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।লেখক: সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।