• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:১৬:১৩ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:১৬:১৩ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: দেশের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতাল নীলফামারীর ‘সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাব’। দাবি করা হয়, বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠিত ফাইলেরিয়া হাসপাতালও এটি। অনেক সম্ভাবনা নিয়ে তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালটি।অনেক চিন্তা ভাবনার পর এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন প্রফেসর ডা. মো.  মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি সৈয়দপুর শহরের ধলাগাছ কামারপুকুর এলাকায় এটি নির্মাণ করেন। ওই সময় তিনি নিজে হাসপাতালের জন্য কিছু জমি ক্রয় করেন এবং বাকি জমি ওই এলাকার সমাজসেবক মরহুম কবির সরদার হাসপাতালকে দান করেন।এরপর শুরু হয় ভবন নির্মাণ কাজ। সে সময় সৈয়দপুরবাসী আনন্দে ছিল আত্মহারা। কারণ গোদ রোগী সবচেয়ে বেশি ছিল উত্তর অঞ্চলে। যার কারণে হাসপাতালটি সৈয়দপুরে করা হয়। হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পর নিয়োগ করা হয় লোকবল। অত্যন্ত সুন্দরভাবে চলতে থাকলো চিকিৎসা সেবা। অল্প খরচে করা হয় বেশ কয়েকটি অপারেশন।কিন্তু হঠাৎ করে দেখা দেয় নানা অনিয়ম। এলাকার কিছু লোক হাসপাতালে নিয়োগ পেয়ে শুরু করে অনিয়ম। বিশেষ করে অপারেশনে বাড়তি টাকা গ্রহণ। হাসপাতালের ঔষধ চুরি। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ায় খেটে তার টাকা জমা না করাসহ নানা অনিয়মে শুরু একটি চক্র। তাদের বিভিন্ন অনিয়মের বেড়াজালে বন্দি হয়ে অসহায় হয়ে পড়েন পরিচালক। একপর্যায়ে মামলা পাল্টা মামলার ঘটনাও ঘটে। এরই মধ্যে অনেকে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে চলে যান। এভাবে একসময় হাসপাতালটি পরিত্যাক্ত হয়ে পরিণত হয় গোচারণ ভূমিতে।এর পরও কয়েক দফায় হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগ নেয় এলাকার লোকজন। কিন্তু মূল পরিচালক প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন মনোক্ষুণ্ন হয়ে ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি হাসপাতাল নিয়ে আর কোনো কথা বলেন না। জানা গেছে, তিনি নতুন করে আরও একটি ফাইলেরিয়া হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন ঢাকার সাভারে।দীর্ঘ কয়েক বছর এভাবে পড়ে থাকার পড় ওই হাসপাতালটি মূল পরিচালকের সাথে চুক্তি করে রংপুর পীরগঞ্জের রাকিবুল হাসান তুহিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি চুক্তিতে নেয়ার পর প্রথমে হাসপাতালটির নাম পরিবর্তন করে রাখেন সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব। এরপর দেন বিভিন্ন পদে নিয়োগ। সে সময় নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। আকর্ষণীয় বেতনে নিয়োগ দেয়া হলেও পরে তাদের বেতন নিয়েও তালবাহানা করা হয়। এরই মধ্যে আবার শুরু হয় গন্ডোগোল। হয় মামলা মোকদ্দমা।এভাবে আবার হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়।তারপর হঠাৎ করে চুক্তিকারী ব্যক্তি রাকিবুল হাসান তুহিন নতুন করে আবার লোকবল নিয়োগ দেন। পত্রিকার ওই নিয়োগের ফটোকপি প্রচার করেন সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে। বিষয়টি নজরে আসে স্বাস্থ্য বিভাগের। তাই তদন্তে এসে অনুমোদন না থাকায় সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাবটি সিলগালা করে দেন নীলফামারী জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।২০০২ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে ছিল। হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই সময় স্থানীয়ভাবে ১৮ জন দেশি-বিদেশি চিকিৎসককে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে সফলতা বয়ে আনেন।এ ছাড়াও জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। কানাডা ও জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকেও গবেষণাকর্মীরা আসেন এখানে। তবে ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সংকট ও সমস্যার সৃষ্টি করা হয়। হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির বিবাদে ভেঙে পড়ে সেবা কার্যক্রম। এ কারণে মুখ ফিরিয়ে নেয় দাতা সংস্থাগুলো। দেশের একমাত্র এই ফাইলেরিয়া হাসপাতালের কার্যক্রম মুখ থুবরে পড়ে।পরে ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে নামমাত্র টোকেন মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার প্রত্যয়ে হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করে।বাংলাদেশ প্যারামেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান আইএসিআইবি-এর সঙ্গে ভুয়া চুক্তিনামা দেখিয়ে এর কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন করে ১০১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তখন চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। এক পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা বেতন-ভাতা না পেয়ে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।কিন্তু গত ২৬ মে প্রতিষ্ঠানটি পত্রিকায় আবারও ২৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় প্রতারণার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরা জানতে পারি, এই ফাইলেরিয়া হাসপাতাল অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাবের কোনও অনুমোদন নেই। এ ছাড়াও হাসপাতালে নিয়মিত কোনও চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীসহ যেসব সুবিধা থাকা দরকার সেগুলোর কিছুই নেই। তাই হাসপাতালটি ১২ জুন সিলগালা করা হয়।এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. আতিয়ার রহমান শেখ, সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. আলতাফ হোসেন প্রমুখ।