• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ভোর ০৫:০৬:২৭ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ভোর ০৫:০৬:২৭ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

‘এআই কখনোই একজন ভালো কনটেন্ট রাইটারের জায়গা নিতে পারবে না’

অজন্তা রেজওয়ানা মির্জা, একজন কনটেন্ট রাইটার, প্রশিক্ষক ও সফল উদ্যোক্তা। ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্ক ও দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে শতভাগ সফলতার সাথে কাজ করছেন। নিজে কাজ করার পাশাপাশি ‘কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা’র মাধ্যমে অন্যদেরকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে তৈরি করছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন (বেসিস) থেকে ফিমেল ক্যাটাগরিতে আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?রেজওয়ানা মির্জা: আন্তর্জাতিক ও দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার পর খেয়াল করলাম যে, আমাদের দেশেও ভালো কনটেন্ট রাইটারদের জন্য সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমাকে নক দিয়ে রাইটার খোঁজ করে, কিন্তু খুঁজে পায় না। অন্যদিকে দেশে প্রচুর পরিমাণে ভালো রাইটার আছে, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। তারা চাইলেই দিনের ২/৩ ঘণ্টা সময় বের করে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে পার্টটাইম কাজ খুঁজতে পারে। সেটা তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও অনেক উপকার হবে। এই চিন্তা থেকেই আসলে কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা (Content Writing with Azanta) শুরু করা।প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?রেজওয়ানা মির্জা: ২০১৫ সালে বেসিসের অ্যাওয়ার্ডটা পাওয়ার পর থেকেই আমাদের নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার শুরু হয়। তখন থেকেই আসলে বাংলাদেশে ‘ফ্রিল্যান্সিং’ শব্দটা জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। প্রচুর পরিমাণে মানুষ, বিশেষ করে মেয়েরা আমাকে ফেসবুকে ও ফোনে নক দিতে শুরু করেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে চাকরি করতে পারছেন না, অথবা বাসায় ছোট বাচ্চা বা সংসারের কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। তারা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং এবং কনটেন্ট রাইটিংয়ে আগ্রহী ছিলেন। এমনকি আমার স্কুল কলেজের অনেক ফ্রেন্ডও আমাকে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করতো যে, তারা বাসায় বসে কিছু কাজ করতে পারবে কি না। তারা সবাই আমার অনুপ্রেরণা। এইসব নারীদের জন্য কিছু করার কথা আমি অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছিলাম।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।রেজওয়ানা মির্জা: অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম বছরে অন্তত ১০ জন নারীকে যেন আমি কনটেন্ট রাইটিং শিখিয়ে পার্টটাইম বা ফুল্টাইম কাজ জোগাড় করে দিতে পারি। কিন্তু ব্যাপারটার আনুষ্ঠানিক রূপ পায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে। তখন আমি প্রথমবারের মতো কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা’র ব্যানারে আমার ট্রেইনিং সেন্টারটা শুরু করি। শুধু মেয়েরা না, আমার অনলাইন ট্রেইনিংয়ে ছেলেরাও ভর্তি হয়। প্রথম যখন শুরু করি তখন মাত্র ৩ জন ভর্তি হয়েছিলো। সে সময় আমি জুম ক্লাসে টানা কথা বলে গিয়েছি। আস্তে আস্তে ৭ জন, ১০ জন করে এখন প্রতি ব্যাচে ৬০ থেকে ৭০ জন করে ভর্তি হয়।আমি ১০ দিনের একটা সেশন নেই প্রতি মাসে। এই ১০টা ক্লাসে কনটেন্ট রাইটিংয়ের পুরো ধারণা দিয়ে দেয়া হয়। শুধু এখানেই শেষ না, প্রতিটা স্টুডেন্টকে আমি পার্সোনালি গাইড করি, তাদের লেখা দেখে আমার মতামত জানাই। তাদের প্রমোট করি এবং ক্লায়েন্টদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। শুধুমাত্র একবার ভর্তি হয়ে প্রতিটি স্টুডেন্ট আমার কাছ থেকে পার্মানেন্ট সাপোর্ট পায়।প্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?রেজওয়ানা মির্জা: প্রথমত, কনটেন্ট রাইটিং কী এটা অনেকেই বুঝতো না। ‘ফ্রিল্যান্সিং’ শব্দটা আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়, কিন্তু আয় করতে গেলে যে কোনো একটা কাজ শিখে আসতে হবে, সেটা অনেকেই জানতো না। হাজার হাজার মানুষ প্রশ্ন করতো, কনটেন্ট রাইটিং মানে কী এবং তাদের সেটা বোঝাতে হতো।আমার কোর্সে আমি সবাইকে ভর্তি করি না। যারা শর্টকাটে আয় করতে চায় বা কিছু না শিখেই আয় করতে চায়, তাদের জন্য আমার কোর্স না। আমি শুধুমাত্র তাদেরকেই শিখাই যারা আসলেই লেখালেখি করতে ভালবাসে, আর এই কাজে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়।তাছাড়া, আমি যখন এই কোর্সটা শুরু করি, তখনই এআই (AI) বা  চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) চলে আসে। তাই অনেকেই মনে করে যে, এখন থেকে আর কনটেন্ট রাইটিংয়ের জন্য মানুষের দরকার পড়বে না। কিন্তু এটা ঠিক না। এআই বা চ্যাটজিপিটি কখনোই একজন ভালো কনটেন্ট রাইটারের জায়গা নিতে পারবে না। এটা মানুষকে বোঝাতে আমার অনেক সময় লেগেছে।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।রেজওয়ানা মির্জা: আমার সামনের পরিকল্পনা হচ্ছে, আমি বাংলাদেশকে অন্তত ৫০০ খুব উন্নত মানের কনটেন্ট রাইটার উপহার দিবো। আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ খুবই ভালো লেখে, কিন্তু তারা কনটেন্ট রাইটিংয়ের নিয়মগুলো জানে না। তারা জানে না কীভাবে কাজ পেতে হয়, কোথায়, কীভাবে খুঁজতে হয়। তাদেরকে ঠিক গাইডলাইন দেয়াই আমার পরিকল্পনা।অন্যদিকে, আমাদের ই-কমার্স, ব্লগিং আর লোকাল কোম্পানিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কনটেন্ট রাইটার লাগে, আর তাদের খুঁজে আনতে হয় বাইরে থেকে। অথচ, দেশের ভেতর লেখকরা কাজ পাচ্ছে না। যেহেতু আমি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কনটেন্ট রাইটিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে জড়িত, আমি বহু মানুষের সঙ্গে পরিচিত। তারা প্রায়ই কনটেন্ট রাইটার খুঁজেন এবং তাদের জন্যে কনটেন্ট রাইটার তৈরি করে দেয়াই আমার প্ল্যান।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?রেজওয়ানা মির্জা: রাষ্ট্র প্রতিটা পদক্ষেপেই আমাদের সাথে আছে। যখন ফ্রিল্যান্সিং করতাম, ইন্টারনেট সুবিধা, বাইরে থেকে টাকা আনার সুবিধা, সব পেয়েছি। এখনও আমি আলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর করে আমার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া, রাষ্ট্র চায়, আমাদের নারীরা ঘরে বসে না থেকে স্বাবলম্বী হোক, ছেলেরাও বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাক। তাই, আমি মনে করি, রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযোগ ও অনুপ্রেরণা দুটি আমি পাচ্ছি।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ। রেজওয়ানা মির্জা: আমাদের তরুণরা অনেক দক্ষ এবং কর্মঠ। কিন্তু তারা হয়তো সঠিক গাইডলাইনটা পাচ্ছে না বা জানে না, কোথা থেকে সেটা পাবে। আমি হয়তো তাদের অন্যকিছুতে সাহায্য করতে না পারলেও যারা যারা কনটেন্ট রাইটিং শিখতে চায় এবং এই দক্ষতায় ক্যারিয়ার তৈরি করতে চায়, তাদের জন্য আমি আমার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি আছি।