কালাইয়ের ১২৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: প্রতিবছর ভাষার মাস এলেই শহীদ মিনার নিয়ে কথা হয়। আলাপ-আলোচনা হয় কিন্তু কার্যকরি পদক্ষেপের অভাবে আর বাস্তবায়ন হয় না। ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরে পা রাখলেও নেই শুধু ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার। যদিও সরকারি আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যতামূলক। শিক্ষার্থীরাও মহান জাতীয় দিবসগুলো পালনে থাকে যথেষ্ট সচেতন।প্রতিবারের মতো এবারও ২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। সে দিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল। অথচ কালাই উপজেলায় একুশের প্রথম প্রহরে ১২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মেলেনি কোনো শহীদ মিনার। এমনকি অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ছুটি ভোগ করেছেন।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ার পিছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন সচেতন মহল।উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন, ইফতেদায়ী এবং মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ মিলে প্রায় ১৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারমধ্যে-মোসলেমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, পুনট শান্তিনগর উচ্চবিদ্যালয়, হারুঞ্জা উচ্চ বিদ্যালয়, আওঁড়া উচ্চবিদ্যালয়, মাত্রাই মাজার শরীফ দাখিল মাদ্রাসা, কালাই টেকনিক্যাল মহিলা বিএম কলেজসহ মোট ১২৭টিতেই নেই কোনো শহীদ মিনার।এছাড়া মাত্র ৩৩টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করার নির্দেশ থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং ওই নির্দেশকে উপেক্ষিত করা হয়েছে। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মহান জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য, ইতিহাস এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে একেবারেই বঞ্চিত হচ্ছে।তবে, শহীদ মিনার নেই এমন কিছুসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে এলাকার বিদ্যালয় মাঠে ফাঁকা জায়গায় কলা-গাছ পুঁতে বাঁশ-কাঠ ও বিভিন্ন রঙ্গের কাগজ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করে পালন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবস।সেই সাথে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও পুষ্পমাল্য অর্পণ করে ওই সব অস্থায়ী শহীদ মিনারে। এতে ভাষা আন্দোলন ও দেশ স্বাধীন হওয়ার এতোদিন পরেও শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা চাহিদাপত্র নিলেও কোনো বরাদ্দ আসেনি। তবে আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দ্রুত পদক্ষেপ নেব।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোনোয়ারুল হাসান বলেন, 'শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাউশির নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেওয়া আছে। এতো দিনে কেন তারা শহীদ মিনার স্থাপন করলেন না, সে বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হায়াত বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা যেন শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। ’কালাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ভাষা শহীদের কথা তুলে ধরতে ও সম্মান জানাতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা খুবই প্রয়োজন। এই বিষয়ে আমি দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।